পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১১৮ হেম বলিতে গিয়া একট: হাসিয়া আর বলিলেন না । ইতিমধ্যে হীরে তামাক দিয়া গেল। হেম তামাক খাইতেছেন আর ভাবিতেছেন, কি প্রকারে তাঁহার মনোগত বিষয়ের প্রস্তাব করিবেন। ক্ষণকাল তামাক টানিয়া গোপালকে হ’কা দিয়া কহিলেন, “খান মহাশয় ।” গোপাল হ’কাটি লইয়া বৈঠকে রাখিলেন । হেম কহিলেন, “তাও ত বটে, আপনি তামাক খান না । তবে আমাকে দিলেন না কেন, আমিই রাখতাম !" এই কথার পর উভয়ে একট চাপ করিয়া রহিলেন। গোপাল হেমের আলমারির দিকে চাহিতে লাগিলেন । হেম এই অবকাশ পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি বলেছিলেন বই নিয়ে যাবেন, কিন্তু তাতে অসুবিধা হবে না ? হয় ত এক সময়ে আপনার ও আমার এক বয়েরই দরকার হতে পারে " গোপাল কহিলেন, “আপনার দরকার হ’লে অবশ্য আমি নেবো না । তবে আপনার যে-সমস্ত বই দরকার না হবার সম্ভব, তাই যদি মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে দেন, তাহা হ'লেই আমার যথেস্ট উপকার হয় ।” হেম উত্তর করিলেন, “আমি সে অভিপ্রায়ে বলি নাই । আমার মনোগত ভাব এই যে, দু-জনে এক পথানে থাকলে ভাল হয়।" গোপাল হেমের মুখ পানে চাহিয়া কহিলেন, “আপনার না এক জন ব্রাহ্মণ আছে ? হেম । আপনাকে কি আমি ব্রাহ্মণ হয়ে থাকতে বলছি ? আমিও যেমন থাকবো, আপনিও তেমনি থাকবেন, এই আমার ইচছা । গোপাল কথা কহিলেন না। অবনত মুখে মাটি দিকে দটি নিক্ষেপ করিয়া রহিলেন । হেমও ক্ষণকাল চপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি বলেন ?” গোপাল গাঢ়স্বরে কহিলেন, “মহাশয়, আমি একলা নই। আমার এক দিদি আছে । আমরা দু-জনেই এক জায়গায় থাকি।” হেম বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “আপনার কেমন দিদি ?” গোপাল ছল ছল নেত্রে উত্তর করিলেন, “মহাশয়, আমাদের অবস্থা চিরকাল এরপ ছিল না । আমার মায়ের শ্যামা নামে এক জন দাসী ছিল, সে-ই আমাকে প্রতিপালন করেছে বলে হয় । যত মায়ের ধার না ধারি, শ্যামার কাছে তদপেক্ষা সহস্ৰ ঋণী আছি । এককালে কোন দর্ঘটনাবশতঃ আমাদের অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা হয়েছিল ; তখন শ্যামার পদবসঞ্চিত কিঞ্চিৎ ধন ছিল, তাতেই আমাদের জীবন রক্ষা হয়েছে । মা মরবার সময় আমাকে শ্যামার হাতে সমপণ ক’রে গিয়েছিলেন । সেই অবধি আমরা যেখানে যাই, দু-জনেই একত্র যাই, শ্যামা আমাকে না দেখলে তিন দিনেই মরে যাবে।” : গোপালের কথা শুনিয়া হেমচন্দ্রের চক্ষে জল আসিল ।