পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১২ • শ্যামার কথা শুনিয়া গোপালের যার-পর-নাই আহলাদ হইল। রন্ধন শেষ হইলে এক দৌড়ে হেমবাবর বাটীতে গিয়া শ্যামার মত বলিয়া আসিলেন । হেমবাবাও শনিয়া পরম সন্তোষ লাভ করিলেন। দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ নবনারী পজা আসিতেছে। শরতের সমাগমে বসন্ধরা উলাসে নত্য করিতেছে । বন্ধেরা সম্মবৎসরের পর মহামায়ার শ্রীচরণে জবা বিলবদল দিবে বলিয়া আনন্দে ভাসিতেছে । বিদেশপথ যুবকেরা প্রণয়িনীর মনস্তাষ্টি করিবার নিমিত্ত নানাবিধ দ্রব্যাদি ক্ৰয় করিতেছে ; বিরহিণী মনে মনে কতই রসপণ" কথার হার গাঁথিতেছে । বালকেরা ইসকলে বন্ধ হইবে বলিয়া কতই আমোদ করিতেছে । দীন দুঃখী সবৎসরের পর একখানি নতন বস্ত্র পরিতে পাইবে বলিয়া মনে মনে কতই উল্লসিত হইতেছে । এক স্থানে বাসজনিত গোপাল ও হেমের পরস্পর অত্যন্ত সোঁহাদ জম্মিল । গোপাল হেমকে দাদা বলিয়া ডাকেন এবং হেমও গোপালকে সহোদরের ন্যায় স্নেহ করেন । হেমচন্দ্র কহিলেন, “গোপাল, তুমি কি বাড়ী যাবে ? যদি না যাও, তা হ’লে আমাদের বাড়ী চল ।” গোপাল উত্তর করিলেন, “আমার বাড়ী যাওয়া হবে না । আপনি যদি নিয়ে যান, তবে আপনাদের বাড়ী যাই ।” হেম ও গোপাল বাড়ী, আসা অবধি সবণলতা গোপালকে “গোপাল দাদা” বলিয়া ডাকেন। গোপাল দাদা না পড়াইলে সবৰ্ণলতার পড়া হয় না। কোন বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করিতে হইলে গোপাল দাদার কাছে যান। গোপাল যেন যথাথাই সবণের সহোদর। হেম জিজ্ঞাসিলেন, “সবণ, তুমি আজ ক'দিন পড়লে না ?” সবণ’লতা হাসিয়া কহিলেন, “পড়বো না কেন ? আমি ত রোজই পড়ি।" হেম । তোমার বই আন দেখি, আমি পড়াই । সুবৰ্ণ হাসিতে হাসিতে একখানি নবনারী আনিয়া হেমের সম্মখে রাখিলেন । হেম জিজ্ঞাসিলেন, “কোথায় পড়বে ?" সবণ* উত্তর করিলেন, “সীতা ।” হেম সেইখানে খলিয়া পড়িতে আরম্ভ করিলেন এবং এক এক ছেদ পৰ্য্যন্ত পড়িয়া বণকে সিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, “বঝেছ ত ?” সবণ ক্ষাণকাল মনোনিবেশপবেক শ্রবণ করিয়া কহিলেন, "দাদা, তুমি বড় তাড়াতাড়ি পড়, আমি তোমার কাছে পড়বো না । গোপাল দাদার কাছে পড়বো ।”