পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ : ১৩১ বিছানা করিয়া বসিয়া আছেন। তাহার বাম ভাগে একটি বনাত-মোড়া টেবিল । টেবিলের উপর কতকগুলি হাতীর দাঁতের পতল। তাহার পশ্চাভাগে কতকগুলি চিনের মাটির পতলে, টেবিলের ধারে একখানি চেয়ার রহিয়াছে, বাবর সম্মখে আমলাবগ বসিয়া লেখাপড়া করিতেছেন । মেজেটের সাহেব আসিবেন বলিয়া বাব আজি স্বয়ং কাজকৰ্ম্ম করিতেছেন । তাঁহার চক্ষ রঃবণ, নাসিকার অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ স্ফীত ও জবাফুলের মতন লাল। কথা কহিতে গেলে কথা পণ্ট নিগত হয় না। অনবরত পাখার বাতাস করিতেছেন, তথাপি মুখে মাছি বসা নিবারণ করিতে পারিতেছেন না । বাবকে দশন করিয়াই মেজেটের সাহেবের অভক্তি হইল। পরে দই তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলেন। বাব নিজের বধিতে কোনটির উত্তর দিতে পারিলেন না। শশিভুষণ যাহা শিখাইয়া দিলেন, তাহাই বলিলেন । মেজেটের সাহেব সপষ্টই বুঝিতে পারিলেন যে, শশিভষণই সৰবময় কত্তা । তদশনে মেজেস্টর সাহেব হািকম দিলেন যে, যত দিন পৰ্য্যন্ত সরকার হইতে ম্যানেজার না নিযুক্ত হয়, তত দিন কাছারির কাযf্য বন্ধ থাকে । আর শশিভষেণ কি প্রকারে জমিদারি শাসন করিয়াছেন, তাহার হিসাব তলব করিলেন । শশিভাষণের শিরে বজ্ৰাঘাত হইল ; ভবিষ্যতে কাজ করিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে তাঁহার কোন চিন্তা হইল না। তাঁহাকে যে পাবের হিসাব দিতে হইবেক, এ-ই তাঁহার প্রধান ভয়ের কারণ । যদি তাঁহাকে একেবারে কম"চ্যত করিয়া দিত, তাহা হইলে তিনি ইহা অপেক্ষা সহস্ৰগণে সুখী হইতেন । শশিভষেণ বিরসাদনে বাটী আসিলেন । অন্যান্য দিন তিনি কাছারি হইতে উঠিলে সকলেই সসম্ভ্ৰমে উঠিয়া দড়িাইত, আজি সকলেই নিজ নিজ কাম করিতে লাগিল । তাঁহাকে কেহ গ্রাহা করিল না। রাস্তা দিয়া বাটী চলিয়া যাইবার সময় দ-ধারের লোকে সেলাম করিল না। শশিভাষণ ভরসা করিয়া উদ্ধে দৃষ্টি করিতে পারিলেন না । হে’টমখে বাটী আসিয়া শয্যায় শয়ন করিলেন । প্রমদা জিজ্ঞাসিলেন, "সাহেব এসে কি বলে ?” শশিভাষণ কহিলেন, "আর কি বলবে ? আমার স্বনাশ ক’রে গেল।" প্রমদা জিজ্ঞাসিলেন, “কি সম্ববনাশ ?" শশী উত্তর করিলেন, "আমার কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। আর যত দিন বুঝান শেষ না হবে, তত দিন অন্য কায্যে হাত দিতে পারবো না ।" প্রমদা শুনিয়া আর কোন প্রশ্ন বা উত্তর করিলেন না। সন্ধ্যার পর্বে শশিভাষণ গিয়া বৈঠকখানায় বসিলেন । সন্ধ্যা হইয়া গেল, আজ আর আমলাবগের মধ্যে কেহই আসিল না । এক এক বার বারে শব্দ হয় আর শশিভুষণ উৎসাহে চাহিয়া দেখেন, কিন্ত কি দেখিতে পান ? হয় ত চাউলের মহাজন, নতুবা কাপড়ের দোকানদার আপনাপন প্রাপ্য টাকা লইতে আসিয়াছে। রাত্রি ৮টার সময় শশিভাষণ আমলাদিগের বাটী লোক পাঠাইয়া দিলেন ।