পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৩২ পবোঁ যাহারা তাঁহার বাটী ছাড়িত না, আজি তাহাদের সকলেরই “প্রয়োজন আছে।” কেহই আসিতে পারিবে না। ৯টার সময় শশিভাষণ রামসুন্দর বাবর বাটীতে গেলেন । সেইখানে গিয়া সকলকে এক পথানে দেখিতে পাইলেন । অন্য অন্য দিবসের মত অদ্য আর কেহ উঠিয়া অভ্যর্থনা করিল না। রামসুন্দর বাব আগ্নে শশিভাষণের সম্মখে তামাক খাইতেন না ; আজি বঝি পৰবন্ধতি পরেণ করিবার জন্যেই অনবরত হ:কা টানিতেছেন । শশিভাষণ যে তামাক খান, তাহা ভলিয়া গিয়াছেন। শশিভষেণ বসিয়া আছেন । কেহই তাঁহার সহিত কোন কথা কহে না । ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া সকলে উঠিবার উদ্যোগ করিলেন ; তদশনে শশিভাষণ কহিলেন, “আমি আপনাদের কাছে এলাম।” খাতাঞ্জি ব্যংগ করিয়া কহিলেন, “এত অনুগ্রহ ? আমার নিকট কি কোন প্রয়োজন আছে ?” মহরি খাতাঞ্জিকে কহিলেন, “আসন, রাত হ’ল ।” শশিভাষণ কহিলেন, “একটা অনুগ্রহ ক'রে বসন । আমি আপনাদের সকলেরই কাছে এসেছি ।" শশিভষেণের কথা শুনিয়া সকলে বসিলেন । শশিভষেণ কিঞ্চিৎ পরে কহিলেন, “আপনারা রক্ষা না করলে ত আমার নিস্তার নাই, তাই আপনাদের শরণ নিতে এলাম।” রামসন্দের বাব উত্তর করিলেন, “আমার সাধাই বা কি, ক্ষমতাই বা কি ? আমি কেরাণী মানষে ; আমার হাতেও কেউ নাই, আমিও কার হাতে নই।" শশিভাষণ কহিলেন, “তা, সত্য, কিন্তু এ বিপদে আপনি না রক্ষা করলে আর আমার উপায়ান্তর নাই ।” অন্যান্য বহিরা বসিয়া ছিলেন, এই কথা শুনিয়া উঠিয়া যাইতে উদ্যত হইলেন । কহিলেন, “তবে আমাদের কাছে কোন প্রয়োজন নাই ?” শশিভাষণ কহিলেন, “আপনাদের সকলেরই কাছে আমার দরবার” এই বলিয়া তিনি গলায় বস্ত্ৰ দিয়া জোড়হন্তে এক পাবে বসিলেন । শশিভাষণের চক্ষ হইতে ধারা বহিতে লাগিল । খাতাঞ্জি প্রভৃতি সকলেই শশিভষেণকে গলবস্ত্র দেখিয়া নরম হইলেন। অনেক বাকবিতণ্ডার পর স্থির হইল, শশিভাষণ চারি জনকে চারি হাজার টাকা দিতে পারিলে তাঁহারা শশিভষেণের অপরাধ ঢাকিয়া লইবেন, কিন্তু এই কড়ারে যে, শশিভুষণের নিন্দোষিত সপ্রমাণ হইলে তিনি স্বেচ্ছাপবেক কায্য ত্যাগ করিয়া যাইবেন । শশিভুষণ আর উপায়ান্তর না দেখিয়া তাহাতেই সম্মত হইলেন ।