পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষটুত্রিংশ পরিচ্ছেদ “গোপাল কোথায়” বিপদ কখন একক আইসে না। একবার আসিতে আরম্ভ করিলে দলবদ্ধ হইয়া আসিতে থাকে। হেমচন্দ্রের পিতার মৃত্যু হইয়াছে। পরিবারেরা সে কথা বিস্মত হইতে না হইতেই হেমচন্দ্র বসন্ত রোগে আক্রান্ত হইলেন। সে বৎসর কলিকাতায় ভয়ানক বসন্তের প্রাদ্ভাব হইয়াছিল এবং ঐ রোগে বহুসংখ্যক লোক কালগ্রাসে পতিত হয়। কলেজের একজন সবিজ্ঞ বহদশী ডাক্তার তৎকালে কলিকাতার বায় পরীক্ষা করিয়া তন্মধ্যে বসন্তের প:জ দেখিতে পাইয়াছিলেন যাহাদের একবার বসন্ত হইয়া গিয়াছে, তাহদেরও পুনরায় বসন্ত হইয়াছিল। হেমচন্দ্রের জর হইয়া তৃতীয় দিবসে তাঁহার শরীরে বসতের গটি দেখা দিল । হেমচন্দ্র গোপালকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসিলেন, “গোপাল, তোমার টীকা হয়েছে ?” গোপাল উত্তর করিলেন, “হী হয়েছে।" তখন হেম কহিলেন, “আমার শরীরে বসন্ত দেখা দিয়েছে ; তোমরা সাবধান হয়ে থাক।” গোপাল হেমের শরীরের প্রতি দটি করিলেন ; দেখিলেন, সবাংগ ব্যাপিয়া ছোট ছোট লাল রঙ্গের ঘামচির ন্যায় গটি হইয়াছে। দেখিয়া তাঁহার শরীর কম্পিত হইল। কিন্ত হেমকে কিছু বললেন না, নিজে চাদর লইয়া অবিলবে ডাক্তারের নিকট গেলেন। ডাক্তার সাহেব আসিয়া পরীক্ষা করিয়া বলিলেন, "হাঁ, বসন্তই বটে।” দুই তিন দিবসের মধ্যে হেমের সর্বশরীর সফীত হইল। কাঠার বেদনায় কথা কহিতে পারেন না এবং জলটক পৰ্য্যন্ত গলাধঃকরণ করিবার শক্তি রহিল না । সমস্ত দিবস অনাহারে নীরবে শয্যায় শয়ন করিয়া থাকেন । গোপালের আর আহার নিদ্রা নাই । নিয়ত হেমের বিছানার পাবে বসিয়া থাকেন । আহারের সময় সেইখানে তাঁহাকে চারিটি অন্ন দিয়া যায় ; কোন দিন খান, কোন দিন বা যেমন ভাত, তেমনি পড়িয়া থাকে। হেম এক দিবস অতি কণ্টে কহিলেন, "গোপাল, ভাই, তুমি এখানে সমস্ত দিন বসে থেকো না, কি জানি যদি তোমার বসন্ত হয়।” গোপাল কোন উত্তর করিলেন না। কিয়ৎক্ষণ পরে হেম জিজ্ঞাসা করিলেন, “গোপাল, আমার ব্যারামের কথা বাড়ীতে কি কারকে লিখেছ ?” গোপাল উত্তর করিলেন, “না। কাহাকেও লিখি নাই ।” হেম কহিলেন, “তবে আর কারকে লিখো না ।” একটু পর গোপাল জিজ্ঞাসা করিলেন, "দাদা, বাড়ী থেকে দখানা চিঠি এসেছে, পড়বে কি ?" হেম উত্তর করিলেন, “তুমি খালে পড়। পড়ে যে উত্তর লিখতে হয়, লিখে দাও । আমার পীড়ার কথা উল্লেখ ক'রো না।”