পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৩৪ গোপাল চিঠি পড়িয়া জবাব দিলেন, “সকলে ভাল আছে।" ইহার দুই তিন দিবস পরে হেমের আর সংজ্ঞা রহিল না, সমস্ত দিন রাত কেবল প্রলাপ বকেন। তন্মধ্যে সবণ ও গোপালের নামই অধিক । গোপাল শিয়রে উপবেশন করিয়া ক্ৰমাগত নেষে্গল হইতে বাপবারি বিসজ্জন করিতে থাকেন । শ্যামা আপনার কাজকৰ্ম্ম সমাধা করিয়া হেমের নিকট সমস্ত দিবস বসিয়া থাকেন। এক দিবস অশ্রুপণে নয়নে গোপাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “দিদি, এমন হয়ে কেউ কি বাঁচে ?” শ্যামা উত্তর করিল, “ভয় কি ? এ ত সামান্য বসন্ত হয়েছে । আমি এর অপেক্ষা কত বেশী বসন্তওয়ালা রোগীকে বাঁচতে দেখিছি।” গোপাল কহিলেন “আমার মাথার দিব্যি, বল দেখি বাঁচে কি না ?” শ্যামা কহিল, “আমি মিথ্যা কথা বলছি ? কত লোক এর চাইতে বেশী বসন্ত হয়ে বে'চে উঠেছে ৷” গোপাল ক্ষণকাল অশ্রুপণ নয়নে নীরবে বসিয়া আছেন, এমন সময়ে রাস্তায় গাড়ীর শব্দ হইল এবং হেমচন্দুের বাসার কাছে আসিয়া শব্দ থামিয়া গেল । গোপাল শ্যামাকে কহিলেন, "দিদি, দেখ দেখি, বঝি ডাক্তার সাহেব এসেছেন।" শ্যামা উঠিয়া গিয়া দরজা খলিয়া দিল। ডাক্তার সাহেবই এসেছেন। ডাক্তার সাহেব রোগীর শয্যার নিকট আসিয়া পুংখানুপুঙ্খরুপে রোগীকে নিরীক্ষণ করিয়া তাঁহার হস্ত ধরিয়া নাড়ীর গতি দেখিলেন। পরে মুখ বক্র করিয়া কহিলেন, *এরুপ অজ্ঞানের ভাব কত ক্ষণ পয্যন্ত হয়েছে ?" গোপাল উত্তর করিলেন, "আজ সকাল বেলা পয্যন্ত আর একটিও কথা কন নাই ।” ডাক্তার সাহেব আবার মুখ বক্র করিলেন । গোপাল ডাক্তার সাহেবকে জিজ্ঞাসিলেন, “ৰোগ কি কঠিন হয়েছে ?" ডাক্তার সাহেব উত্তর করিলেন, "খালি কঠিন নয়, রোগ সাংঘাতিক হয়েছে । গোপালের চক্ষ হইতে জলধারা বহিতে লাগিল । তদশ"নে ডাক্তার সাহেব কহিলেন, "কে"দো না । যত্নপৰব’ক রোগীর সেবা শশ্রষা করো ; এখনও বাঁচবার আশা আছে ।” গোপাল আবাসিত হইলেন । ডাক্তার সাহেব যাহা করিতে বলিলেন, সেসমস্ত লিখিয়া লইলেন এবং ঠিক সেইরপে রোগীর শশ্রেষা করিতে লাগিলেন । ডাক্তার সাহেব চলিয়া গেলে গোপাল শ্যামাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “দিদি, এত দিন বাড়ীতে কোন খবর পাঠাই নাই, কিন্তু এখন আর চপ ক’রে থাকা যায় না। তুমি কি বল ?” শ্যামা কহিল, “খবর পাঠান উচিত। যদি এখানে ভাল মন্দ ঘটে, তা হ’লে তাঁরা ভাববেন যে, পরের হাতে পড়ে কিছ: শুশ্ৰষা হয় নাই, বিনা-চিকিৎসায় বিনা-যত্নে মারা পড়েছে।”