পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৩৮ না। সবণ, গোপাল তোমার দাদার যেরপে সেবা শশ্রেষা করছে, অমন কেউ কারকে করে না।” শশাঙ্কের কথা শুনিয়া সবণের হৃদয়ে অনিৰ্বাচনীয় আহলাদের সঞ্চার হইল । তিনি আর কিছু কহিলেন না। শশাঙ্কও তথা হইতে চলিয়া গেলেন। বহিদ্বারে গিয়া শশাঙ্ক আপন ভ্যত্যকে দিয়া তাঁহার প্রতিবাসী হরিদাস মুখোপাধ্যায়কে ডাকাইলেন । হরিদাস আসিয়া নমস্কার করিয়া জিজ্ঞাসিলেন, “আমাকে ডাকলে কেন ?" | শশাঙ্ক কহিলেন, “একটা বড় গোপনীয় কথা আছে।" হরিদাস । এইখানে বলবে, না অন্যত্রে যেতে হবে ? শশাঙ্ক । চল, ঐ দিকে গিয়া বলি । উভয়ে তথা হইতে গাত্ৰোখান করিয়া মন্দ মন্দ গতিতে গংগাতীরে গমন করিলেন। সয'দেব অসন্তাচলে চলিয়া গিয়াছেন । পণিমার চন্দ্র প্রাচাঁদেশ হইতে পরম রমণীয় কিরণজাল বিস্তার করিতেছেন। বসতের সমীরণহিলেলালে শরীর অনিবিচনীয় উৎসাহ অন্যভত হইতেছে। কল কল রবে কণ' শীতল করিয়া গঙ্গা সাগরসংগমে যাইতেছেন। নিকটবৰ্ত্তী উদ্যান হইতে নানাবিধ পপের সৌরভ আসিয়া দশ দিক আমোদিত করিতেছে । এই পরম রমণীয় সময়ে কত স্থানে কত লোক ঈশ্বরের কর্ণায় বিমুগ্ধ হইয়া তাঁহার চরণে আত্মসমপণ করিতেছে । কিন্তু শশাঙ্কশেখর ও হরিদাস সে সময়ে কি পরামর্শ করিতেছেন ? উভয়ে গঙ্গাতীরে গমন করিয়া ঘাসের উপর উপবেশন করিলেন । হরিদাস জিজ্ঞাসিলেন, “কি কথা বলবে বলো। রাত্ৰি হ’ল, এর পর সন্ধ্যাহিক করতে হবে ।” শশাঙ্কশেখর কহিলেন, "এত ব্যস্ত হ’লে কেন ? এ সব কি ব্যস্তের কাজ ?” হরিদাস । তোমার কাজই কি, তাই টের পেলাম না ; তা কেমন ক’রে জানবো-ব্যপ্তের, কি সন্তের ? শশাঙ্ক কহিলেন, “তবে শন। আমরা এত কাল যার পরামর্শ করে আসছি, আজ দেবতাই তার আনকল্য করেছেন। সেই বর্ধমানের কন্যাটি, যার সহিত তোমার পত্রের বিবাহ দিবার প্রস্তাব হয়েছিল ; সেটি হস্তগত হয়েছে।” হরিদাস আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসিলেন, “সে কেমন ?” শশাঙ্ক উত্তর করিলেন, *বিপ্রদাস জীবিত থাকতেই এ প্রস্তাব করা হয়, তাহা তুমি ত জানই । বোধ হয় বিপ্রদাসের মতও হয়েছিল । আমার কথা সে কখনও লংঘন করতো না। কিন্ত তার পত্রের জন্যই কায্যটা হতে পারে নাই । সে বৎসর প্রজার আগে আমাকে বলেছিল, "আপনি যে আজ্ঞা আমাকে করেছেন, আমার তাহাই কৰ্ত্তব্য, কিন্তু আমার পত্রটি এখন যোগ্য হয়েছে, একবার তাহার পরামর্শ লওয়া উচিত।” হরিদাস কহিলেন, “ও সব কথা ত বহ কাল শুনেছি, এখন কিছু টাটকা থাকে, তবে বলো ।”