পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টক্রিংশ পরিচ্ছেদ : ১৪৩ এই কথার পর শশাংক ও হরিদাস উভয়ে গঙ্গাতীরে নামিয়া সন্ধ্যাহিক করিতে গেলেন । বাহার যে ব্যবসায়, তাহার তাহাতে ভক্তি হয় না। গয়লারা দগ্ধ খায় না, ময়রারা সন্দেশ খায় না, চিকিৎসকেরা ঔষধ খায় না, শুড়ীরা মদ খায় না, আর যদি লোকজন সম্মুখে না থাকে, তবে ভট্টাচাৰ্য্যরা সন্ধ্যাহিক করেন না। শশাঙ্ক গংগাতীরে দু-এক বার জল নাড়িয়া কহিলেন, "হরিদাস, চল যাই । সংক্ষেপে সেরে নাও।” পজা করা হরিদাসের ব্যবসায় নহে, সতরাং তিনি প্রতি দিন যেরপ করিয়া জপ করেন, আদ্যও সেইরুপ করিয়া, উভয়ে একত্র হইয়া চলিয়া গেলেন । রাস্তায় শশাঙ্কশেখরের বাটী গিয়া হরিদাস বণলতাকে চক্ষুষ দেখিয়া প্রত্যয় করিলেন, “কন্যা যথার্থই হস্তগত হইয়াছে।” অষ্টত্রিংশ পরিচ্ছেদ "আনায় মাঝারে” হেমচন্দ্র এক্ষণে আরোগ্য হইতে লাগিলেন । আজ যেরপে থাকেন, কাল তদপেক্ষা ভাল হন। কিন্তু এ পয্যন্ত বিছানা হইতে উঠিয়া বাহিরে আসিতে পারেন নাই । গোপাল পৰ্ববং সমস্ত দিন রাত্রি হেমের শয্যার নিকট বসিয়া থাকেন । হেম আর কাহারও নিকট কিছু চান না । গোপাল তাঁহাকে খাওয়াইবে, তাঁহার হাত ধুইয়া দিবে, তাঁহাকে শয্যা হইতে উঠাইয়া বসাইবে, তাঁহার সহিত গল্প করিবে । গোপাল হেমের জীবনসসবসিব । শশাঙ্কশেখর প্রত্যহ রেলগাড়ীতে কলিকাতায় যান, আবার সন্ধ্যার সময় বাটী আইসেন। হেমের পিতামহীর কৃতজ্ঞতা আর রাখিবার স্থান নাই, কিন্তু শশাংক কি অভিপ্রাযে প্রত্যহ আইসেন যান, তাহা ত টের পান না ! সবণলতা শশাঙ্কশেখরের নিকট কতই কৃতজ্ঞ হইতেছেন । অন্য লোককে বিশ্বাস না করিয়া প্রত্যহ আপনি গিয়া হেমচন্দ্রের খবর আনেন । ইহা অপেক্ষা দয়ার কায আর কি হইতে পারে ? শশাঙ্কের আসিবার সময় হইলে সবণ’লতা বাটীর দ্বারদেশে দাঁড়াইয়া থাকেন। শশাঙ্কশেখরকে দরে হইতে দেখিতে পাইয়াই দৌড়িয়া গিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করেন। এক দিবস সবৰ্ণলতা কহিলেন, “ঠাকুর মহাশয়, আপনার ঋণ আমি এ জমে দরে থাকক, জন্ম-জন্মান্তরেও পরিশোধ করতে পারবো না। আপনি প্রত্যহ এত ক ট স্বীকার ক’রে খবর আনেন ব'লেই বোধ হয় আমি এত দিন এখানে আছি। তা না হ'লে হয় ত এত দিন নকিয়ে কলিকাতায় যেতাম।” শশাঙ্কের দয়ার কথা কহিতে কহিতে সবৰ্ণলতার চক্ষ হইতে দু-এক বিন্দ, জল পড়িতে লাগিল। কিন্তু তাঁহার প্রতি কথায় যেন শশাঙ্কের হৃদয়ে শেল বিধ হইল। দস্যরা কোন বাটী আক্ৰমণ করিবার সময় বালকদিগকে কিছ বলে