পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টক্রিংশ পরিচ্ছেদ : ১৪৫ সবণ’লতাও সেই বিছানায় শয়ন করিলেন । ঝির ঝির করিয়া বসন্তের বাতাস ৷ তাঁহার গায়ে লাগিতে লাগিল । সবণলতা আস্তে আস্তে নিদ্রিত হইলেন । শশাঙ্ক নিয়মিত সময়ে বাটী আসিয়া স্ত্রীকে ডাকিলেন । উভয়ে গহে প্রবেশ করিলে শশাংক জিজ্ঞাসা করিলেন, “খোকার কাছে শময়ে কে ?" শশাঙ্কের মন্ত্রী কহিলেন, "প্ৰবণ” ।” শশাঙ্ক । জেগে আছে, না ঘুমিয়েছে ? সবণ, শশাংক বাটী আসিবা মাত্র জাগ্রত হইয়াছিলেন । কিন্ত তাঁহার স্ত্রীর সহিত ফিস ফিস করিয়া কথা কহিতেছেন শুনিয়া কপট-নিদ্রিত হইলেন । শশাঙ্কের স্ত্রী সবণের কাছে আসিয়া তাঁহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “ঘুমিয়েছে।" শশাঙ্ক । ( অসফট স্বরে ) তবে তুমি একবার আস্তে আস্তে এই দিকে এস । শশাঙ্কের স্ত্রী অগ্রসর হইলেন। শশাঙ্ক মদ বরে দুইটা চাবি দেখাইয়া কহিলেন, “এই দুইটা চাবি দেখছো একটা সদরে, একটা খিড়কির । আমি দ্য দিকেরই বার বন্ধ করেছি ; দেখো, যেন বাড়ী হতে অন্য কোনরপে কেহ বাহির হতে না পারে " শশাঙ্কের সত্ৰী কহিলেন, "সে কি ? বাড়ী থেকে বেরোবে কেন ?" শশাংক কহিলেন, “তোমার সে কথায় কাজ কি ?" শশাঙ্কের সূত্রী। আমার কাজ আছে । আমাকে বলতে হবে, না বলে আমি এখনই এ কথা প্রকাশ করে দেবো । শশাংক সমদায় প্রকাশ করিয়া বলিলেন । তাঁহার মন্ত্রী শুনিয়া শিহরিয়া উঠিলেন । এবং সবণলতার হৃৎকপ উপস্থিত হইল। শশাঙ্কের স্ত্রী দীঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন । তদশ"নে শশাঙ্ক কহিলেন, “তুমি ত আমাকে জানই ; যদি তোমা কত্তাক আমার মনস্কামনা বিফল হয়, তা হ’লে তোমাকে—"এত দর পয্যন্ত স্পষ্ট বলিয়া, পরে অসফট সবরে দুই তিনটি কথা কহিয়া শশাংক বহিবটীতে গমন করিলেন । সবণের যেন নিশ্বাস বন্ধ হইয়া আসিতে লাগিল । কিন্তু জাগ্রত থাকিয়া কি প্রকারে নিদ্রাভঙ্গের ভান করিবেন, স্থির করিতে না পারিয়া, ক্রোড়পথ শিশুটির গায়ে একটি টিপ দিলেন। ছেলেট কাঁদিয়া উঠিল । সবণাও চক্ষ মুছিতে মুছিতে শয্যা হইতে গাত্ৰোখন করিলেন । শশাঙ্কের সন্ত্রী দীঘনিশ্বাস ছাড়িয়া কাতর স্বরে জিজ্ঞাসিলেন, "মা, তুমি ঘুমিয়েছিলে ?" সবণ "হাঁ” বলিয়া তথা হইতে চলিয়া গেলেন । খিড়কির বারে গিয়া দেখেন, দুবার রন্ধ । দৌড়িয়া সদর দরজায় গেলেন । সদর দরজা বাহির দিক হইতে বন্ধ দেখিলেন। সবণ’লতা বেন পিঞ্জরে বন্ধ পক্ষীর ন্যায় হইলেন । এত দিন ঐ বাড়ীর মধ্যে ছিলেন, তাহাতে কোন কট বোধ হয় নাই । কিন্তু আজি তথাকার বায় তাঁহার নিকট বিষময় বোধ হইতে লাগিল, সে বায়: সেবন করিয়া জীবন ধারণ করা ক্লেশকর হইয়া উঠিল । দৌড়িয়া সবণলতা-১o