পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ গোপালের কারাবাস পোট অফিসের সনাতন নিয়মানসারে অগ্রে সাহেবদিগের চিঠি বিলি হয়, তৎপরে যদি সময় থাকে এবং যদি মহানভব হরকরা মহোদয় ক্লান্ত না হন, তাহা হইলে অন্যান্য সকলের চিঠি বিলি হইবার সম্ভাবনা। কিন্তু যদি হরকরা মহাশয় ক্লান্ত হন, বিশেষ যদি দারের কোন পথানের একখানি চিঠির অতিরিক্ত না থাকে, তবে সবিবেচক হরকরা সে চিঠিখানিকে ব্যাগের মধ্যে রাখিয়া দেন । ক্ৰমে সেই পথানের দশ পাঁচখানি একত্র হইলে এক দিবস অপরাহ্লে গজেন্দ্রগমনে সেগুলিকে বিলি করিতে যান। বর্ণলতা যে চিঠিখানি লিখিয়াছিলেন, সাধারণ নিয়মানসারে সেখানি পরদিবস গ্রাতেই হেমের বাসায় পৌছান উচিত ছিল ; কিন্তু উলিখিত সনাতন নিয়মের কোন এক "ধারার মমে” চিঠিখানি দেরি করিয়া তিনটার সময় দশন দিল। চিঠিখানির শিরোনামায় হেমের নাম। গোপাল ইতিপবে সবণলতার হস্তাক্ষর দেখেন নাই । বাটী হইতে যে সমস্ত চিঠিপত্র আসিত, তাহা বাটীর গোমস্তাই লিখিত। সুতরাং এখান বাটীর চিঠি নয় ভাবিয়া তিনি খলিলেন না । হেম নিদ্রিত আছেন, তাঁহাকেও জাগাইলেন না । একটু পরে হেমের নিদ্রাভঙ্গ হইল । গোপাল চিঠিখানি হেমের হস্তে দিলেন । শিরোনামা দেখিয়া হেম কহিলেন, “সবণের চিঠি গোপাল ।” গোপাল কল্পিতকরে চিঠিখানি গ্রহণ করিয়া মনে মনে পাঠ করিলেন । কিন্ত কি পড়িলেন, হেমকে কহিলেন না । হেম জিজ্ঞাসিলেন, “কি লিখেছে ?” গোপাল তাচ্ছিল্য করিয়া চিঠিখানি খাটের নীচে ফেলিয়া দিয়া কহিলেন, “আর কি লিখবে, তুমি কেমন আছ, তাই জিজ্ঞাসা ক’রে পাঠায়েছে।” হেম, সন্ত ট হইয়া পাব পরিবত্তন করিয়া শুইলেন, কিন্তু তখন যদি গোপালের মুখ পানে নিরীক্ষণ করিতেন, তাহা হইলে তাঁহার মুখ জবাফলের ন্যায় লাল ও কপালে ঘগ্গম" দেখিতে পাইতেন । “আমি আসি” বলিয়া গোপাল চিঠিখনি কড়াইয়া লইয়া নীচে হেমের পিতামহীর নিকট আসিলেন এবং শ্যামাকে হেমের কাছে পাঠাইয়া দিলেন । পরে চিঠিখানি হেমের পিতামহীকে পড়িয়া শনাইলেন । হেমের পিতামহী শুনিয়া রাগে কশিপতকলেবরা হইয়া গরদেবকে গালি দিতে লাগিলেন । গোপাল কহিলেন, “আপনি অত গোলমাল করবেন না। দাদা শুনলে অত্যন্ত কস্ট পাবেন । আমি চললাম, চারটা বেজেছে, ছটার সময় বিবাহ ৷ এখনি না গেলে গাড়ী পাব না।" এই বলিয়া একখানি চাদর কন্ধে ফেলিয়া ও একগাছি ছড়ি লইয়া হেমের পিতামহীকে পুনরায় কহিলেন, “আপনি এ কথা কারকেও কইবেন না। আপনি এইখানেই থাকন, নচেৎ উপরে গেলে প্রকাশ করে ফেলবেন। দাদা আমার কথা জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, আমার কোন নিজের বিশেষ প্রয়োজনবশতঃ ভবানীপরে চললাম। হয় ত আসতে পারবো না।” এই বলিয়া বাহির