পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৪৯ শরীর অবশ হইয়া আসিল । হেমের পীড়া হওয়া অবধি তাঁহার সচাররপে অহার নিদ্রা হয় নাই । তদব্যতীত রেলওয়ে আসিতে যে কষ্ট হইয়াছিল, এই সমস্ত কারণে গোপাল মচ্ছিত হইবার উপক্ৰম দেখিয়া গাড়ীতে শয়ন করিলেন । এবং ক্ৰমে ক্ৰমে সমীরণ সঞ্চালনে তাঁহার নিদ্রাবেশ হইল। গোপাল নিদ্রিত হইলেন । কোথায় বা শ্রীরামপুর, কোথায় বা সবৰ্ণলতা ! গোপাল নিদ্রা যাইতেছেন । এমন গাঢ় নিদ্রা গোপালের কখনও হয় নাই । কত স্থানে গাড়ী থামিল, কত নতেন লোক আসিল, কত পরাতন লোক চলিয়া গেল, গোপালের নিদ্রাভঙ্গ হইল না। রাত্রি নয়টার সময় গাড়ী গিয়া বন্ধমানে উপস্থিত হইল। জনেক রেলওয়ের কমচারী এক এক করিয়া গাড়ী খলিয়া টিকিট লইতেছে। লোকজন চতদিকে গোলমাল করিতেছে। তথাপি গোপালের ঘাম ভাঙ্গে না। পরে যে গাড়ীতে তিনি ছিলেন, রেলওয়ে কর্মচারী তাহার বারে দাঁড়াইয়া ল’ঠন দ্বারা তাহার অভ্যন্তরে আলোক নিক্ষেপ করিল । গাড়ীতে এক মাত্র গোপাল । রেলওয়ে কমচারী “বাব:" “বব” বলিয়া দুই চার ডাকায় গোপাল উঠিলেন । “এই গ্রীরামপুর ?” কমচারী কহিল, “তুমি সবগুন দেখছি না কি ? এ বন্ধমান ।” কমচারীর কথা শুনিয়া গোপালের মাথা ঘুরিয়া গেল ; মহত্তে ব্ৰহ্মাণ্ড দেখিলেন । যেমন বসিয়া ছিলেন, অমনি বসিয়া রহিলেন । উঠিবার শক্তি রহিল न ! কম"চারী কহিল, “এখন এস, টিকিট দাও।” গোপাল দীঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “আমার কাছে টিকিট নাই । দাম লও।” কমচারী কহিল, ”টিকিট নাই অনেক ক্ষণ টের পেয়েছি ; এখন চল, টেশনে সাহেবের কাছে চল ।” এই বলিয়া তাহার হস্ত ধারণপৰব’ক স্টেশনে লইয়া চলিল । কিন্ত সাহেব তৎকালে তথায় উপস্থিত না থাকায় বড় বাব গোপালকে সে রান্ত্রি গারদে রাখিবার জন্য হািকম দিলেন । সে রাত্রি গোপালের কস্ট অনভত হইতে পারে, কিন্ত বর্ণনাতীত। প্রথমতঃ ভাবিলেন, “স্বৰ্ণলতা হইতে জন্মের মতন বঞ্চিত হইলাম।” গোপাল স্পষ্ট কিছুই শোনেন নাই, তথাপি তহির মনের কেমন এক বিশ্বাস ছিল যে, তাঁহার সবণ"লতা লাভ হইবেক । এক্ষণে একেবারে সে বিশ্বাসের মালোচ্ছেদ হইয়া গেল। দ্বিতীয় ভাবনা এই—“কেন আমি দাদাকে চিঠির মঞ্চম বলিলাম না ? কেন আমি আপনার ইচ্ছামত এই গরতর কায্যের ভার গ্রহণ করিলাম ? হয় ত দাদা শুনিলে অন্য কোন উপায়ে উদ্ধার করিতে পারিতেন । গ্রহণ করিয়াই বা কেন আমি প্রাণপণে সে কায্য সাধনে যত্ন করিলাম না ? হায়! কেন বা নিদ্রিত হইয়াছিলাম ? এখন কি প্রকারে ফিরিয়া গিয়া দাদার নিকট মুখ দেখাইব ? দাদা আমাকে সম্পণ বিশ্বাস করেন। আমি কিন্ত: কি কৃতয়ের কাজ করিলাম। সবণলতাকে আমি চিরদঃখিনী করিলাম। যদি আমি তাঁহার চিঠি তাঁহাকে দিতাম অথবা পড়িয়া