পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৫০ শনাইতাম, তাহা হইলে হয় ত কখনই এরাপ হইতে পারিত না । বৰ্ণলতা এ বিবাহের পর আত্মহত্যা করিবেন, তাহার সন্দেহ নাই। আমারও তাই করা উচিত। এ পাপে আর তাহা ভিন্ন কি প্রায়শ্চিত্ত হইতে পারে ? হায় ! এত ক্ষণ স্বর্ণলতা দাদাকে নিন্দা করিতেছে, কিন্ত আমিই যে তাহার সম্ববনাশ করিলাম, তাহা জানিতে পারিতেছে না ।" গোপাল এইরুপ বিলাপ করিয়া রজনী প্রভাত করিলেন । কিন্ত নিজে যে কারাগারে আছেন, সে জন্য তাঁহার চিন্তার লেশ মাত্রও হইল না । মনে করিলেন, “আমি ত রজনী অবসান হইলেই মুক্ত হইব, কিন্তু সবৰ্ণলতার শঙ্খেল আর এ জন্মেও ভাঙ্গিরে না ।” চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ তরী ডুবু ডুবু তাজি সবণের বিবাহ ; বরের বাটীতে মহাধমে । কলিকাতা হইতে ইংরাজি বাদ্য আসিয়াছে। পড়ার ছেলেতে এবং রাস্তার লোকে সদর-বাটীর উঠান পরিপািণ । পালটি সহজেই দেখিতে সশ্রী নয়। একে কালো, তাহার উপরে লাল চেলী পরিয়া শম্ভনিশুম্ভের যন্ধের রক্তবীজের ন্যায় ভীষণাকার ধারণ করিয়াছেন । তাঁহার সমপাঠী বন্ধরা নিমন্ত্রিত হইয়া আসিয়াছেন, বর তাহাদিগের মধ্যে বসিয়া আছেন । বিবাহের দিবস বর কন্যার কতই আদর ? দীন দুঃখী হইলেও সে দিন লোকে তাহাদিগকে যত্ন করে ; যার-পর-নাই কংসিত হইলেও তাহাদিগকে দেখিতে আইসে । যাহারা জন্মাবধি প্রত্যহই দেখিতেছে, তাহারাও আজি এক বার নতন করিয়া বর দেখিতে আসিতেছে। মাঝে মাঝে একজন লোক গিয়া বরকে ডাকিয়া আনিতেছে । বর বয়স্যদিগের নিকট হইতে অত্যন্ত অনিচ্ছা প্রকাশপথবাক উঠিয়া আসিতেছেন । কিন্ত সে অনিচ্ছাটি আন্তরিক নয় । শশাঙ্কশেখর প্রাতঃকালে গাত্রে খান করিয়া সবণকে ডাকিয়া কহিলেন, “সবণ", আজ তুমি কিছু আহার করো না ।" সবণ যেন আশ্চয্য হইয়াছেন ভান করিয়া কহিলেন, “কেন ?" শশাঙ্ক বিকট হাস্য হাসিয়া কহিলেন, “আজ তোমার বিবাহ ।" শশাঙ্কের বিকট হাস্যে সবণের হৃৎকল্প হইল । অন্যান্য দিন শশাঙ্কের যেরপে চেহারা দেখিতেন, আজ যেন তাঁহার চক্ষে আর সে চেহারা নাই । তিনি পশতকে যে সব দৈত্য দানবের কথা পাঠ করিয়াছিলেন, শশাঙ্ক যেন তাহারই একজন বলিয়া সবণের বোধ হইতে লাগিল । শশাঙ্ক পুনৰবরি কহিলেন, “আজ তোমার বিবাহ বণ” এবং কথা সমাপন করিয়া আর একবার প্রধবাপেক্ষা ভীষণতর বিকট হাস্য হাসিলেন ।