পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৫২ বরের বাটীতে গিয়া শশাংক বাদ্যকরদিগকে আপন বাটীতে আনিল এবং কহিয়া দিল, “যখন বাড়ীর মধ্যে কান্না শনবে, তখন বাজাবে।" সবণলতা কত কাঁদিলেন, কত রাগ করিয়া তিরস্কার করিলেন, কত করজোড়ে স্ততি করিলেন, নিষ্ঠর শশাঙ্ক কিছুতেই শুনিল না। স্বণ শশাঙ্ককে কহিলেন, “আমার বিবাহ দিয়ে তুমি যত টাকা পাবে, আমি তোমাকে তার বিগণ দেবো, আমাকে ছেড়ে দাও । বাবা আমাকে যত টাকা দিয়ে গিয়েছেন, আমি সকলি লিখে পড়ে দিচ্ছি ; আমাকে দাদার কাছে পাঠায়ে দাও।” শশাংক কহিল, "তোমার সে টাকা দেবার অধিকার অদ্যাপি হয় নাই, নচেৎ আমার কোন আপত্তি ছিল না ।" সবণ । আমি প্রতিজ্ঞা ক'রে বলছি—আমি দেবো । শশাঙ্ক কহিল, "শশাঙ্কশেখর শম্মী প্রতিজ্ঞায় ভোলেন না ।" স্বৰ্ণলতা কহিলেন, “তবে তোমার কিসে প্রত্যয় হয় বলো, আমি তাই করবো ।” শশাঙ্ক । তোমাকে পারস্থ করতে পারলেই আমার প্রত্যয় হয় । সবণলতা কহিলেন, “তোমার ত মেয়ে আছে ? আমাকেও তোমার মেয়ের মতন মনে করো। তোমার মেয়ের কি জোর ক'রে বে দেবে ?" "আমার মেয়ে তোমার মতন নিলাজ নয় যে, বের কথা নিয়ে এত গোল করবে। আমি যেখানে তার বিয়ে দেবো, তার সেইখানেই বিবাহ হবে । তার এ বিষয়ে তোমার মতন মতামত নাই। সে পড়াশনা করে নি, তার ভাইও ইংরাজি জানে না ।" স্বৰ্ণলতা কিঞ্চিৎ লজ্জিত হইয়া চপ করিলেন । শ্রীরামপর দিয়া রেলওয়ে গাড়ী আসিতেছে যাইতেছে, নিয়মিত কাল পর্যন্ত তথায় থামিতেছে। এক এক বার গাড়ীর শব্দ হয় আর সবণলতা মনে করেন, “এইবার আমাকে নেবার জন্য লোক আসছে।" আহা ! কয়টা আশা সফলবতী হয় ? সমস্ত আশাই সফলবতী হইলে পথিবী সবগ সম হইত। বর্ণলতা একবার নৈরাশ হন, আবার মনে করেন—এ গাড়ী কলিকাতায় যাচ্ছে, এখানা কলিকাতা হতে আসছে না। ইচ্ছা হইলে কল্পনারপ অনুভব করা যায়, বর্ণলতার কানে এমনি শব্দ হইতে লাগিল—যেন আজি সমুদায় গাড়ী কলিকাতায় যাইতেছে। কলিকাতা হইতে একখানিও আসিতেছে না । - ক্ৰমে দিবা অবসান হইতে লাগিল । সয্যেদেবের দয়া মমতা নাই । কত শত রোগী শয্যায় শয়ন করিয়া রজনীর সমাগম দেখিয়া কপি তকলেবর হইতেছে । সমুদ্রে কত শত তরী বিপথগমনের ভয়ে সয'দেবের পশ্চিমে গতি দেখিয়া ব্যাকল হইতেছে । রজনী আসিলে বর্ণলতা চিরজীবনের জন্য শোকসাগরে নিমজ্জিতা হইবেন ভাবিয়া কতই রোদন করিতেছেন। এ সমস্ত দেখিয়া শনিয়া কি দিনকরের হৃদয়ে এক বারও কর্ণার সন্টার হয় না ? তাঁহারা কি পিতা পত্র উভয়েই সমান ?