পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৫৩ হায় । যে সময় তোমার পর অন্তজলে, সেই সময়ে কত শত লোকের পত্রের বিবাহ হইতেছে । কত শত লোকের রাজ্য লাভ, ধন লাভ হইতেছে। সযf্যদেবের কি পক্ষপাত করিলে চলে? জয়দ্রথের জন্য তিনি এক দণ্ড আগেও অন্তাচলে যান নাই। সদ্য"দেবের বংশে পক্ষপাতিত্ব নাই, তাঁহারা পিতা পত্র উভয়েই সমান। যতই সন্ধ্যা হইতে লাগিল, ততই সবণলতার উৎকণ্ঠা বধি হইতে লাগিল । এক্ষণে আবার আর এক ভাবনা উপস্থিত হইল। সবণ’লতা মনে করিলেন, হয় ত তাঁহার দাদার পীড়া বধি হইয়াছে, কিবা—ভাবিতে হৃদয় কম্পিত হয়—তদপেক্ষা গরতের অশুভ ঘটনা হইয়াছে। শশাংক অদ্য দুই দিবস আর কলিকাতায় যায় নাই। সবণ আপনার দুঃখ ভুলিয়া গেলেন । হেমের শারীরিক প্ৰাচ্ছন্দ্য জানিবার জন্য তাঁহার চিত্ত যার-পর-নাই ব্যগ্র হইল । কেহই নিকটে আসিতেছে না, যাহার কাছে খবর লইতে পারেন । শশাংক এক্ষণে অত্যন্ত ব্যস্ত ; তাহার আর সবণের নিকট আসিবার অবকাশ নাই । শশাঙ্কের সন্ত্রী ও কন্যাকে প্রাতঃকাল অবধি অন্তঃপরে বধ করিয়া রাখিয়াছে। সন্ধ্যা সমাগত হইল। আকাশে স্থানে স্থানে একটু একটা মেঘ দেখা দিল । বসন্তের সমীরণ বহিতে লাগিল । মালা, চন্দন ও পট্টবস্ত্রে বিকট মাত্তি ধারণ করিয়া বর আসিল, ইংরাজি বাদ্য বাজিল ৷ শঙ্খধ্বনি হইল। বর সভায় বসিল । বালকেরা বরকে লইয়া ঠাট্টা তামাসা করিতে লাগিল । পরোহিত আসিলেন । শশাঙ্ক এ সকলের একট দরে বসিয়া হরিদাসের নিকট হইতে টাকা গণিয়া লইতে লাগিল । সবণলতা আপন কারাগারে বসিয়া রোদন করিতে লাগিলেন। যে কিছ: পরিত্রাণের আশা ভরসা ছিল, সন্ধ্যা হইলে দ্রীভূত হইল। "হা ঈশ্বর ! আমার অদটে এই ছিল" বলিয়া সবণলতা আৰ্ত্তনাদ করিতেছেন। কে তাঁর কান্না শোনে! সকলেই আমোদ-প্রমোদে মত্ত। শশাংক এখনও হরিদাসের নিকট হইতে টাকা গণিয়া লইতেছে। টাকা গণিয়া লইয়া শশাঙ্ক ও হরিদাস উভয়ে সভায় গেল ! দেখিল, সমুদায় প্রস্তুত। কন্যা আনিলেই হয়। শশাংক কন্যা আনিতে আসিল । দ্বারোস্ফাটন করিবা মাত্র সবর্ণলতা দৌড়িয়া শশাঙ্কের চরণে পড়িলেন । রোদন করিতে করিতে কহিলেন, “আগে আমাকে বল-দাদা কেমন আছেন, তা না হ’লে আমাকে নিয়ে যেতে পারবে না ।" শশাঙ্ক কহিল, “তোমার দাদা ভাল আছেন।" সবণ কহিলেন, "আমার মাথা খাও, তোমার ছেলের মাথা খাও, সত্যি কথা বলো ।” সবণের তখন বাহ্যজ্ঞান শণ্য হইয়াছে। কি বলেন, তাহার ঠিকানা নাই । শশাংক কহিল, “আমি যথাৰ্থ বলছি, তোমার দাদা ভাল আছেন । তিনি ভাল আছেন বলেই ত তোমার এত শীঘ্ৰ বিবাহ দিচ্ছি। সম্পণে আরোগ্য হ'লে