পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৫৬ সাহেব এসেছিল ; সে হকেম দিয়ে গিয়েছিল, ‘যদি ওরা ( অথাৎ তাঁর স্বামী ) কাগজ না বঝে দিতে পারে, তবে কম থাকবে না’।” জননী আশ্চয্য হইয়াছেন ভান করিয়া একটা উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, “কি সব্বনাশ ! এখন কি হবে ?” প্রমদা । তুমি যদি অমন ক'রে চ্যাঁচাও, তা হলে এখান থেকে উঠে যাও । জননী । না মা, আর চ্যাঁচাব না । প্রমদা আবার ক্ষমা করিয়া কহিলেন, "কাগজ ত বঝেবার জো নাই । বাবকে মাতাল পেয়ে যে যা পেয়েছে, তাই চরি করেছে, আমাদের এরা চুরি করেন নি, কিন্তু পরে যা নিয়েছে, তার ত ভাগ পেয়েছেন ; এখন হয় জেলে যেতে হবে, নয় পলিপোলাও যেতে হবে ।" পিলেপিনাংকে লোকে প্রায়ই পলি ও পোলাওকে দ্বন্দ্ব সমাস করিলে যে রপে হয়, তাহাই প্রয়োগ করিয়া থাকে । জননী আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসিলেন, "এর আর কি উপায় নাই ?" প্রমদা উত্তর করি:লন, “আছে এক উপায়, কিন্তু সেও না থাকার মধ্যে । এখন যদি চার হাজার টাকা অন্য অন্য আমলাদের ঘষে দেওয়া যায়, তবে রক্ষা হয়। এরা বলছেন রক্ষা হয়, কিন্তু আমার মনে ত ভরসা হয় না।" জননী দরিদ্রের কন্যা, দরিদ্রের বধ, ৫০টি টাকা একত্র কখনও দেখিয়াছেন কি না সন্দেহ । চারি হাজার টাকার নাম শুনিয়া তিনি ফ্যাল ফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিলেন । চারি হাজার কি টেকি, না কলো, তা জানেন না। কিন্তু কথা কহিলে পাছে প্রমদা রাগ করেন, এ জন্য চপ করিয়া রহিলেন । প্রমদা জিজ্ঞাসিলেন, “কথা কও না যে ?" জননী একটু ভাবিয়া বলিলেন, “কত টাকা বল্লে ?” প্রমদা । চার হাজাৱ । জননী একটা ভাবিয়া—“সে ক’ কড়ি ?” প্রমদা সক্ৰোধে কহিলেন, “মরণ আর কি ? তুমি কচি মেয়ে না কি ?” জননী নীরব । প্রমদা পুনরায় কহিলেন, “চার হাজার টাকা দিতে হ’লে আর প্রায় কিছ: বাকি থাকে না । কোম্পানির কাগজগুলি আর গহনাগুলি সব যায়, এখন উপায় কি ?” জননী বিষম বিপদে পড়িলেন, লোকে বলে, বোবার শত্র নাই, কিন্ত: কাৰ্য্যতঃ সে কথা প্রলাপবাক্য মাত্র । তিনি কথা কহিলেও প্রমদা তিরস্কার করেন, না কহিলেও তিরস্কার করেন । আকাশ পাতাল ভাবিয়া স্থির করিতে পারিলেন না—কি বলিবেন । এমন সময় প্রমদা কহিলেন, “আমার বিবেচনায় এ টাকা দিলেও নিস্তার নাই । লাভের মধ্যে টাকাও যাবে; প্রাগও যাৰে । তাই আমি বলি, কোম্পানীর কাগজ, নগদ ও গয়না যা কিছ আছে, এক বিন নিয়ে চলে যাই । এখানে থাকলে চক্ষ লজ্জার খাতিরে দিতে হবে, তফাতে থাকলে আর চক্ষ লজ্জা