পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৫৯ পেয়াদারা বাটীর মধ্যে চল্লো ।” রামসন্দেরের কথা শুনিয়া শশী উম্মত্তের মতন হইয়া কহিলেন, “প্রমদা, এত দিন তোমার সব সৎপরামশের অথর্ণ বকতে পারলাম । তুমি আমাকে বোকা বলতে, আমি যথার্থই বোকা, তাহা না হ’লে তোমার মতন পাপীয়সীর কথায় আমার প্রাণের ভাই বিধকে বাড়ী হ’তে তাড়িয়ে দেবো কেন ? আমার ঘরের লক্ষয়ী সরলাকেই বা মেরে ফেলবো কেন ? সরলা আমার ঘরে আসা পয্যন্ত আমার দুঃখ হয় নাই, ক্লেশ হয় নাই, আমার সংসার রাজার সংসার ছিল । তোর পরামশে আমি এমন সরলাকে পৃথক ক’রে দিলাম । সে যখন অন্নাভাবে মরে, তখন তোরই পরামশে আমি অন্ন দিলাম না । সরলা যখন অনাহারে প্রাণত্যাগ করলে, তখনই আমি জানতে পারলাম, আমার আর ভদ্রত্ব নাই। তুই সরলাকে মেরেছিস, তুই আমার সোনার ভাইকে পথের ভিখারী করেছিস । অবশেষে আমি ছিলাম, তুই আমাকেও খন করলি । আমার যেমন কম", তেমনি ফল । তারই বা দোষ কি ? আমার সোনার প্রতিমা সরলাকে বিসজ্জন দেবার ফল এত দিনে ফললো " এই কথা বলিয়া ক্ষিপ্তের ন্যায় ভীষণ নেত্রে চতুদিকে দটি নিক্ষেপ করিয়া শশিভূষণ গ্রহের অভ্যন্তর হইতে চলিয়া গেলেন এবং অবিলম্বে বহিদ্বারে গিয়া রামসন্দের বাবর সহিত একত্র হইলেন। কাছারিতে সকলে শশিভূষণের মথে পানে নিরীক্ষণ করিয়া ভীত হইল। কেহ কোন কথা না বলিতে তিনি নিজেই সমদায় আত্মদোষের পরিচয় দিয়া কহিলেন, “আমি এই অপরাধ করিছি, আমার উচিত দণ্ড বিধান করুন।" সকলে দেখিয়া শুনিয়া অবাক হইয়া রহিল। ম্যানেজার একজন ডেপুটী কলেক্টর, শশিভূষণের অবস্থা দেখিয়া তাঁহার অত্যন্ত দুঃখ হইল। কিন্ত ন্যায়মত কাৰ্য্য না করিলেও নয়, সতরাং শশিভূষণ যাহা যাহা বললেন, তিনি সকলই লিখিয়া লইলেন, শশিভূষণের কথায় অলপ অধিক পরিমাণে সব লে দোষী হইলেন । মহেনরি, খাতাঞ্জি, হিসাবনবিস ও রামসন্দের বাব, এরা সকলেই শশিভূষণের সহিত হাজতে চলিলেন । সকলকে গারদে দিয়া ডেপুটী কলেক্টর মনে করিলেন, শশিভূষণের অপরাধ সবাপেক্ষা গরে্তর, তাহার বিষয়-আশয় বিক্ৰী করিয়া জমিদারের ক্ষতি পরণ হওয়া উচিত, কিন্ত পাছে অস্থাবর বস্ত সমুদায় স্থানান্তর হয়, এই ভয়ে শশার বাটীতে পলিস পাহারা রাখিয়া দিলেন। সন্ধ্যা বেলা । আকাশমণ্ডল মেঘে আচ্ছন্ন হইয়া বেগে বায় বহিতেছে। দেখিতে দেখিতে অলপ একটা ব্যটি হইয়া গেল। ব্যষ্টি হইয়া কিঞ্চিৎ শীত বাড়িল। দরোগা দীনবন্ধ বাব ও কনস্টেবল রমেশ, শশিভাষণের বাটী পাহারা দিতেছেন। দারোগা আজি নিজে আসিয়াছেন, অপরকে পাহার রাখিয়া তাঁহার প্রত্যয় হইল না। শীতে পাহারা দেওয়া বড় আমোদজনক কাজ নহে। বিশেষ অনভ্যাসপ্রযক্ত অলপ ক্ষণের মধ্যেই দীনবন্ধ বাব বিরক্ত হইয়া কহিলেন, "রমেশ, তুমি ত জান