পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৬০ ভাই, আমি কোন সরকারী লোক দিয়া নিজের কাজ করিয়ে লই না। কিন্তু তোমাকে যে দুই একটা কথা বলি, সে কেবল তোমাকে স্নেহ করি বলে । তুমি ভাই, আজ রামধনার দোকান থেকে আদ পোয়া এনে দিতে পার ? বড় শীত-শীত করছে।” “রামধনের” নাম উল্লেখ করিয়া পরে ওজন বলিয়া দিলে আর জিনিসের নাম বলিতে হয় না। রমেশ কহিল, "আজ্ঞা, আপনার একটা কাজ করবো, তার জন্যে এত কথা বলছেন কেন ? আপনার অনুগ্রহ থাকলেই হ’ল !" ক্ষণকাল বিলম্বে আদ পোয়া আসিল । দারোগা বাবদ বোতলের গলায় তজনী প্রবেশপবেক বোতলটি উপড়ে করিলেন, পরে সেটিকে আবার স্বাভাবিক ভাবে রাখিয়া নিজের অৎগলিটি দীপ-শিখায় ধরিলেন। ভাল জলিল না । ঈষৎ মখে বক্র করিয়া দারোগা বাব কহিলেন, "রমেশ তোমাকে নতন লোক পেয়ে ব্যাটা ঠকিয়ে দিয়েছে ।" কিন্তু দারোগা বাব সে জন্য আদি পোয়া ফেরত দিলেন না । অলপ অলপ করিয়া সেটকে সেবন করিলেন। দারোগা বাব একট পান করিতেছেন, এমন সময় রমেশকে কে ডাকিল । পাঁচ মিনিটের মধ্যে রমেশ শনিয়া আসিলেন । দারোগা বাবর আদ পোয়ায় কিছু হইল না, এ জন্য রমেশকে পুনরায় কহিলেন, “তুমি ত জান ভাই, আমি সরকারী লোক দিয়ে নিজের কাজ ইত্যাদি।" অথংি আর অাদ পোয়া আন । রমেশের এবার মদ আনিতে দেরি হইল । দারোগা বাব আবার সেটকে সেবন করিলেন, এবার আর অগ্ৰগলি দ্বারা পরীক্ষা করেন নাই, কেমন জিনিস, সেবন করিয়া এক মিনিটের মধ্যেই দারোগা বাবর মনে হইতে লাগিল, যেন তিনি দগ্ধফেনসন্নিভ শয্যায় বসিয়া আছেন । যাই এই কথা মনে হইল, অমনি দারোগা বাব তথায় শয়ন করিলেন । যাই শয়ন করিলেন, অমনি নাসিকাধবনি হইল, যাই নাসিকাধনি হইল, অমনি রমেশ বাব কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য দ্বারে শব্দ করলেন । যাই শব্দ করিলেন, অমনি দ্বার খলিল । পর্বেই বলা হইয়াছে, গ্রন্থকত্তারা সহবস্থানেই যাইতে পারেন । যাই রমেশ বাব বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিলেন, অমনি সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থকতাও প্রবেশ করিলেন। করিয়া কি দেখিতে পাইলেন ? প্রমদা ও তাঁহার জননী সমুদায় গয়নাপত্র, টাকাকড়ি, কাপড়-চোপড় একত্র করিয়া মোট বধিয়া প্রস্তুত ! রমেশ বাবকে প্রমদার মাতা ফিস ফিস করিয়া জিজ্ঞাসিলেন, “কোন দরজা দিয়ে যাব ? খিড়কি, না সদর ?” রমেশ সদর । তখন প্রমদার জননী প্রমদাকে কহিলেন, "তবে আর বিলম্ব ক’রো না মা ।” প্রমদা রমেশ বাবর হাতে টাকা গণিয়া দিলেন । রমেশ বাব গণিয়া লইলেন।