পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৬২ পরে কি কারবেন, ভাবিয়া পাইতেছেন না। একবার সদরের দিকে গমন করিলেন, কিন্তু সম্মখে লোকের সমারোহ দেখিয়া প্রত্যাবৰ্ত্তনপৰবক খিড়কির দিকে গমন করিলেন। খিড়কির দিকে ভাল আলো আসিতেছে না। বর্ণ হস্ত হইয়া চলিয়া যাইতে দই তিন বার পড়িয়া গেলেন। কিন্তু জীবনের ভয়ে পলায়ন করিতেছেন, একটা আঘাতে তাঁহার কি হইবে ? খিড়কির দরজার কাছে গিয়া দেখিলেন, দরজা খোলা। হরষিতচিত্তে শশাংক-কারাগার হইতে বহির্গত হইলেন । রাস্তার বায় সেবন করিয়া তাঁহার দেহে যেন জীবন সঞ্চার হইল । সেখানেও অত্যন্ত লোকসমারোহ দেখিয়া সম্মুখে দৌড়িয়া গেলেন। সবণলতা কোন দিকে যাইতেছেন, তাহা টের পাইতেছেন না, অথচ চলিতেও ক্ষান্ত হইতেছেন না। বিবেচনা করিলেন, শশাঙ্কের বাটী হইতে যে-কোন সথানে যাইবেন, সেইখানেই আশ্রয় পাইবেন । এমন সময় এক দ্বিশাখা রাস্তায় আসিলেন । কোনটিতে যাইবেন, স্থির করিবার জন্য ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া বাম দিকে চলিলেন। অনুমান, অন্ধ রসি গমন করিয়াছেন, এমন সময় পশ্চাৎ হইতে কে তাঁহার অঞ্চলাকষণ করিয়া কহিল, "কোথায় যাও ?" সবণ’লতা আতঙ্কে চীৎকার করিয়া পশ্চাদভাগে চাহিয়া দেখিলেন, একটি স্ত্রীলোক । দেখিয়া তাঁহার মনে কিঞ্চিৎ সাহস হইল । সত্রীলোকটিও আসিয়া তাঁহার পাবে দাঁড়াইল । সবণ লতা দেখিলেন, শশাঙ্কের বাটীর দাসী । সে তাহাকে ধরিতে আসিয়াছে ভাবিয়া সবণলতা পনবার আতঙ্কে চীৎকার করিয়া কহিলেন, “আমাকে ছেড়ে দাও, আমি যাব না । না ছাড় ত আমি চ্যাঁচাব।” দাসী কহিল, “ভয় কি ? আমি তোমাকে ধরতে আসি নাই । আমিও তোমার মতন পালাচ্ছি। এই দেখ, ধামনের সর্বনাশ করে এসেছি ।" এই বলিয়া একটি বাক্স দেখাইল । সবণলতা বাক্স দেখিয়া মনে স্থির করিলেন, দাসী যাহা বলিতেছে, যথাৰ্থ । তখন তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোন দিকে যাবে ?” দাসী কহিল, "রেলের রাস্তায় যাওয়া হবে না, তা হ’লে ধরা পড়’ব । চল, আমরা বাঁদিকে যাই । নদী পার হয়ে ওপারে আমার এক মাসীর বাড়ী আছে, আজ সেইখানে গিয়া থাকি । পরে কাল যেখানে হয় যাব।” দাসীর কথা সংগত মনে করিয়া সবণলতা দাসীর পশ্চাৎ পশ্চাৎ যাইতে লাগিলেন । ক্ষণকাল এ-গলি ও-গলি করিয়া উভয়ে গংগাতীরে আসিয়া উপনীত হইলেন । কিন্তু সবৰ্ণলতা যেখানে যান, নৈরাশ তাঁহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ যায়। গংগার ঘাটে প্রথমতঃ নৌকা পাইলেন না। অনেক ক্ষণ কলে প্রতীক্ষা করিয়া পরিশেষে পার হইলেন । গঙ্গা পার হইয়া প্রবণ"লতা দীঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া কহিলেন, “এত ক্ষণে রক্ষা পেলাম।” দাসী কহিল, “তোমার আর ভয় কি ? কিন্তু আমার এখন বিপদ আছে।” সবণ জিজ্ঞাসিলেন, “তুমি এ কম করলে কেন ? চরি করলে কেন ?"