পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬৯

দ্বিচতারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৬৩ দাসী কহিল, "চুরি করবো না। খুব করেছি। ওর মতন পাষণ্ড কি আর আছে ? রাজ্যের লোকের টাকা চরি করে করে বড়মানুষ হচ্ছে। আমি ওর কিই বা নিয়েছি।" বৰ্ণলতা জিজ্ঞাসিলেন, “তুমি এ কেমন করে নিলে ?” দাসী কহিল, “বামন যে সিন্দকে টাকা রাখত, তা আমি জানতেম। অনেক বার নিতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু কখনও সুবিধা পাই নাই। আজ যখন তোমার ঘরে এলো, তখন বাইরে তালার গায়ে চাবি রেখে গিয়েছিল । আমি ভাবলাম, তখনই নি। কিন্ত নিতে গিয়েও ভরসা হ’ল না। তার পর যখন ঘরে আগন লাগলো, তখন ও দৌড়ে গেল ; চাবি পড়ে রইল। আমি ভাবলাম এই সময় ; এখন যদি না নি, তবে আর কখন নিতে পারবো না । বামন যাই চলিয়া গেল, আমিও অমনি চাবি দিয়ে সিন্দকে খুলে এই বাক্সট নিয়ে বেরলাম। তমি আমার আগে আগে বেরিয়েছিলে । তার পর তুমি যখন সদর-দরজার দিকে গেলে, তখন আমি খিড়কির চাবি খলে বেরয়ে এলাম। তাইতেই তুমি দয়ার খোলা পেলে । আমি বেরয়েই দেখলাম, জনক হক লোক যাচ্ছে, অমনি আবার খিড়কির পিছ এলাম। তোমাকে এত ডাকলাম, তুমি শুনতে পেলে না । তার পর তুমি যখন উত্তরের দিকে যাও, তখন দেখলাম, তোমাকে না ফিরালে হয় না, তাই তোমার অচিল ধরে টানলাম, তুমি মনে করলে, আমি তোমাকে ধরতে এসেছিলাম !" এই বলিয়া দাসী হাসিয়া উঠিল । সবণলতা কহিলেন, “আমার যথাৰ্থই মনে হয়েছিল, তুমি আমাকে ধরতে এসেছিলে ।” দাসী সবণ লতাকে কহিল, "চল, ঐ আমার মাসীর বাড়ী দেখা যাচ্ছে, ঐখানে গিয়ে আজ রাত্রে থাকি ৷” সরণলতা জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমি কলিকাতায় যাব কেমন ক’রে ? আবার ত কাল পার হতে হবে, নইলে গাড়ী পাব না । আমার সঙ্গেই মা কে যাবে ?" দাসী কহিল, “কালকার কথা কাল হবে, আজ ত এখন চল ।” এই বলিতে বলিতে উভয়ে দাসীর মাসীর বাটী পৌ’ছিলেন । পবেই বলা হইয়াছে, যে-গহে সবণ’ল তা ছিলেন, শশাংক সেই গহ হইতেই প্রথমে অগ্নি দেখিতে পায় । শশাংক তাহার পর্ব ক্ষণেই চণ্ডীমণ্ডপের পাশবসখ ঘরে তত্ত্বাপোশের দেরাজের মধ্যে হরিদাস-দত্ত টাকাগুলিন রাখিয়া আসিয়াছে। শশাংক অব্যবস্থিতচিত্তে দাঁড়াইয়া থাকিয়া চন্ডীমণ্ডপের দিকে দ্রুতগতিতে গমন করিল। ফাল্গুন মাস ; সমদার জিনিস শাক হইয়া আছে ; অগ্নিপশ মাত্রেই জলিয়া উঠিতেছে। দেখিতে দেখিতে চণ্ডীমণ্ডপের পাশ্ববত্তী ঘরে আগন লাগিল ! লাগিবা মাত্রেই হ হ করিয়া জলিয়া উঠিল । দই পাবে দুই ভয়ানক অনিতম্ভ হইল। ক্ষণকাল মধ্যেই বায় পবোপেক্ষা প্রবল হওয়ায় নিকটস্থ অন্যান্য লোকের ঘর জলিয়া উঠিল । সকলে কোলাহল করিয়া চতদিকে পলায়ন করিতে লাগিল। হরিদাস এক হাতে পত্রের হস্ত ও অপর হাতে