পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : 98 পরোহিতের হস্ত ধরিয়া দড়িাইয়া আছেন। অগিন নিৰ্বাণ হইলে পত্রের বিবাহ দিবেন। শশাঙ্ক বহিবাটী আসিয়া দেখিল, যে-ঘরে টাকা রাখিয়াছে, সে ঘর হা হ: করিয়া জলিতেছে। কিন্তু তথাপি সেই ঘরে প্রবেশপথবাক তক্তাপোশের উপর হইতে বিছানা দরে নিক্ষেপ করিল। পরে দেরাজ খলিবার জন্যে আপনার ঘনসিতে চাবির অনুসন্ধান করিতে লাগিল ; কোমরে চাবি পাইল না । কি মনস্তাপ ! দৌড়িয়া যে-ঘরে সবণলতা ছিলেন, পুনরায় সেই ঘরের দ্বারে গেল । গিয়া দেখিল, তালাটি পড়িয়া আছে, কিন্তু চাবি নাই । তদশনে কপালে করাঘাত করিয়া শশাঙ্ক কাদিয়া উঠিল, “হায় ! আমার সববনাশ হ’ল !" একখানি কাঠারের জন্যে ক্ষিপ্তের ন্যায় চতুদিকে ভ্ৰমন করিতে লাগিল ; প্রয়োজনের সময় কোন দ্রব্যই হাতের কাছে পাওয়া যায় না। এদিক ওদিক অনুসন্ধান করিয়া কঠোর মিলিল। তখন সেই কঠোর-কন্ধে চণ্ডীমণ্ডপের দিকে ছুটিল। গিয়া দেখিল, তখনও ঘরে প্রবেশ করা যাইতে পারে। প্রবেশ করিবে, এমন সময় হরিদাস পশ্চাৎ হইতে তাহার কত্তাকষণপৰব’ক জিজ্ঞাসিলেন, “পাত্রী কোথায় ? চলো, অন্য এক বাড়ী গিয়ে বিবাহ দি ।" শশাংক বাক্যদ্বারা তাহার প্রশ্নের উত্তর প্রদান না করিয়া তাহার মস্তকোপরি কঠোর উত্তোলন করিল । হরিদাস ‘বাবা রে’ বলিয়া দরে পলাইল । শালকাঠের তত্ত্বাপোশ সহজে ভাঙ্গিতেছে না। এদিকে শশাঙ্কের মস্তকোপরি অগ্নি প্রবল বায়ভেরে নত্য করিয়া জলিতেছে। শশাঙ্ক শরীরের সমস্ত পরাক্রমে তক্তাপোশের উপর এক ভীষণ প্রহার করিল। প্রহারে ঘর কপিয়া উঠিল ও তৎক্ষণাৎ চাল হইতে এক জলন্ত আড়কাঠা ভাঙ্গিয়া শশাঙ্কের পাঠদেশে পড়িল ; শশাঙ্কও অমনি তত্ত্বাপোশের উপর নিপতিত হইল। হস্তথিত কুঠারে তাহার বক্ষঃস্থল বিদীণ হইয়া গেল। ক্ষত স্থান হইতে প্রবল বেগে শোণিত বহিতে লাগিল । এদিকে জলন্ত আড়কাঠার আগনে শশাঙ্কের বস্ত্র জালিয়া উঠিল! শশাংক ভীষণ রবে আত্তনাদ করিয়া কহিল, “আমার প্রাণ যায়, রক্ষা কর, অামাকে টেনে বার কর " বাহিরের লোকেরা পরপর পরস্পরের মুখ পানে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। শশাঙ্ক পুনৰবার আত্তনাদ করিয়া উঠিল, “আমাকে রক্ষা কর, আমার যথাসম্ববস্ব তোমাদিগকে দেব।" ঘর পড়ে পড়ে হইয়াছে । বাহির হইতে কেহই তাহার মধ্যে যাইতে সাহস করিল না। দেখিতে দেখিতে মহাশব্দে অগ্নিস্তম্ভের ন্যায় জৰলন্ত চাল শশাঙ্কের উপর নিপতিত হইল। শশাঙ্কের জীবনের শেষ অধ্যায় সমাপ্ত হইল । হরিদাস শেষ পয্যন্ত আশা করিয়াছিলেন, অগিন নিৰবপিত হইলে তনয়ের বিবাহ দিবেন। এক্ষণে সে ভরসায় জলাঞ্জলি দিয়া গহে ফিরিয়া গেলেন । হরিদাসের পত্র ক্ষমমনে সমপাঠী বয়স্যদিগের সহিত ইংরাজি ভাষায় কথোপকথন করিতে লাগিলেন এবং ক্ষণকৃাল এ-রাস্তায় ও-রাস্তায় বেড়াইয়া পরিশেষে তিনিও পিতার অনুসরণ করিলেন। তাঁহার উপবাস মাত্র লাভ।