পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুশ্চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৬৯ হইতে রুপবতী কামিনী যাহাদিগের তটি বন্ধন করে, রজনী তাহাদিগকে শান্তি দান করেন। কারবেন না কেন ? সকলেই যাহাদিগের পদলেহন করে, যামিনী কোন মুখে তাহাদিগকে পরিত্যাগ করবেন ? রজনী প্রভাত হইলে পৰবদিক হইতে দিবাকর দশন দিলেন। সাহেব বাহাদর জানালা খলিয়া দ্বিতীয় দিবাকরের ন্যায় বাহিরে দণ্টিপাত করিলেন। রেলওয়ের বাবরা পিরান ও লালবাধকরা জুতা পায়ে যে যাহার কাষে নিযুক্ত হইলেন। তারের খবর চলিতে লাগিল, ঘোর রোলে ঘণ্টা বাজিয়া টিকিটগ্রাহীদিগকে আহবান করিল। হসে হস শব্দ করিয়া ট্রেন আসিল। আবার ঘণ্টা বাজিল, পতাকা উড়িল, স্টেশন-মাস্টার “অল রাইট” বলিল । সদস্ভে ধরণী কাঁপাইয়া লৌহ-অশব পুনরায় ধাবমান হইল । দু-বার তিন বার গাড়ী এল গেল। গোপালের চিন্তায় শরীর শুকাইয়া যাইতেছে । এক রাত্রের মধ্যেই তাঁহার এরপে চেহারা হইয়াছে, যেন তিনি কত দিন উপবাস করিয়া আছেন । ক্ৰমে ক্ৰমে দশটা বাজিল । তখন সাহেব বাহাদর গোপালের নিকট হইতে মুল্য লইয়া তহিকে ছাড়িয়া দিতে আদেশ করিলেন । গোপাল একটার সময় শ্রীরামপুর আসিবার জন্য পুনরায় বাপীয় শকটারোহণ করিলেন। গাড়ীতে আসিতে আসিতে গোপালের মনে কত ভাবনা উপস্থিত হইতে লাগিল । কখন ভাবিতে লাগিলেন, "বণলতা চিরদঃখ-হ্রদে নিমজ্জিত হইয়াছেন। কখন ভাবিতে লাগিলেন, সবণ” তেমন নয় ! হয় ত আত্মহত্যা করিয়াছেন । ভাবিতে কি ভয়ানক ? যদি আত্মহত্যা করিয়া থাকে, তবে আমার দোৰেই করিয়াছে। কেনই বা আমি ঘুমাইয়াছিলাম ? বৰ্ণলতার যদি বিবাহ হইয়া থাকে, কিবা সবণ" যদি আত্মহত্যা করিয়া থাকে, তাহা হইলে আমার আর এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত নাই ।” এইরুপ ভাবিতে ভাবিতে আসিতেছেন । লৌহ-অশ্ব যথাকালে শ্রীরামপর পৌছিল। ব্যগ্র হইয়া গোপাল গাড়ী হইতে নামিয়া টিকিট দিয়া টেশনের বাহিরে গেলেন। শশাঙ্কের বাটী জিজ্ঞাসা করিয়া অনেক ক্ষণের পর সেই স্থানে উপস্থিত হইলেন । উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, বাড়ী ঘর কিছুই নাই, কেবল কয়েকটি ভস্মরাশি রহিয়াছে, আর পলিসের লোক তাহার চতুদিকে ভ্রমণ করিতেছে । দেখিয়া গোপালের হৃৎকপ উপস্থিত হইল, পদদ্বয় বলহীন হইয়া পড়িল, এবং মস্তক ঘুরিতে লাগিল । গোপাল ভাবিলেন, সবৰ্ণলতা যথাথই আত্মহত্যা করিয়াছেন । এই চিন্তা মনে হওয়াতে গোপাল আর চলিতে পারিলেন না। রাস্তায় শিরে কর সংলগ্ন করিয়া উপবেশন করিলেন। একটি কনস্টেবল তাঁহার সম্মখে দিয়া চলিরা গেল। গোপালের এমন সাহস হইল না যে, কনস্টেবলকে বত্তান্ত জিজ্ঞাসা করেন । ক্ষণকাল তথায় বসিয়া, গোপাল সাহসে ভর করিয়া ভস্মরাশির নিকট গমন করিয়া বিনীতভাবে দারোগাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মশায়, এখানে কি হয়েছে ?