পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৭০ আপনারা কিসের তদারক করছেন ?" দারোগা গোপালের দিকে চাহিয়া বুঝিতে পারলেন যে, গোপাল কোন দুঃসহ মনঃপীড়া পাইয়াছেন। তখন উত্তর করিলেন, “ঘরে আগন লেগে এ বাটীর কত্তা শশাঙ্কশেখর মতিগিরির মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাহারই অনুসন্ধান করছি। শশাঙ্কশেখর কি আপনার কেউ ছিলেন ?” গোপাল দীঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া উত্তর করিলেন, “না মহাশয়, শশাঙ্কশেখর আমার কেউ ছিলেন না । কিন্তু এখানে আর কোন ঘটনা হয় নি ? কেউ কি আত্মহত্যা করেছে ?” দারোগা বাব হাসিয়া কহিলেন, “না না । কেন, সে কথা তোমার মনে হ’ল কেন ?" গোপাল কহিলেন, “আমার ভগ্নী এইখানে ছিলেন। শশাংক জোর করে তার বিবাহ দেবার উদ্যোগ করেছিলেন । আমি সন্ধ্যাবেলা ভগ্নীকে নিয়ে যেতে আসছিলাম। কিন্তু গাড়ীতে অজ্ঞান হয়ে পড়ায় আমার চৈতন্য রহিত হয়। বদ্ধমানে গিয়ে আমার চেতনা হ’ল । আমার ভগ্নী লিখেছিলেন, যদি কেউ তাঁকে না নিতে আসে, তা হ’লে তিনি আত্মহত্যা করবেন।” এই কথা বলিতে বলিতে গোপালের চক্ষ হইতে সহস্রধারে দারি বর্ষণ হইতে লাগিল । দারোগা বাব তাঁহাকে সাত্বনা করিয়া কহিলেন, "ভয় নাই, আপনার ভগ্নী নিরাপদে আছেন । এখানে কেবল এক মাত্র শশাঙ্কেরই কাল হয়েছে । সাক্ষী পাওয়া গিয়েছে, আপনার ভগ্নী আগুন লাগতে লাগতেই পালিয়েছিলেন।” গোপাল দারোগা বাবর কথা শুনিয়া আকাশের চাঁদ হতে পাইলেন । মহত্তমধ্যে তাঁহার মস্তক ঘুরিতে লাগিল ও চক্ষ রক্তবিহীন হইল এবং হস্ত পদ কম্পিত হইতে লাগিল ৷ ‘দারোগ বাব তাঁহাকে সাদরে বিছানায় বসাইয়া, তাঁহার মখে ও মস্তকে জল দিতে লাগিলেন। একট পরেই গোপাল সস্থ হইলে দারোগা বাব জিজ্ঞাসিলেন, “আপনার কি কোন পীড়া আছে ?" গোপাল কহিলেন, “না ।" দারোগা বাব জিজ্ঞাসিলেন, “আপনার আহার হয়েছে ?" গোপাল উত্তর করিলেন, “কাল রাত অবধি কিছু আহার করি নাই।" দারোগা বাব: অবিলম্বে গোপালের জন্য খাবার আনাইলেন । গোপাল কোন মতেই আহার করিবেন না । কহিলেন, “আমার ভগিনীর অনুসন্ধান না করে জলগ্রহণ করবো না ।” দারোগা বাব কহিলেন, “আপনার গায়ে শক্তি না থাকলে কি প্রকারে অনুসন্ধান করবেন ? আপনি আগে আহার করুন, পরে আমার একজন লোক আপনার সঙ্গে পাঠায়ে দেবো ।” দারোগা বাবর কথার গোপাল কিঞ্চিৎ আহার করিলেন। আহার করিয়া দারোগা বাবকে কহিলেন, “আপনি তবে অনগ্রহ করে একজন লোক আমার