পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুশ্চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৭১ সহিত দিন !” দারোগা বাব একজন কনটেবল দিলেন । গোপাল কনটেবলের সহিত প্রতি গহে অনুসন্ধান করিয়া দেখিলেন, কোনখানেই সবণের দেখা পাইলেন না । কপালে করাঘাত করিয়া কহিলেন, “৪৭ণল তা হয় আত্মহত্যা করিয়াছে, নচেৎ পড়িয়া মরিয়াছে।" গোপাল আর ক্ৰন্দন সবরণ করিতে পারলেন না। একট, পরে কনস্টেবলকে বিদায় দিয়া গোপাল গংগা তীরে গিয়া ভীমতে শয়ন করিয়া রহিলেন । গোপাল যেখানে শয়ন করিয়াছিলেন, তাহার অনতিদরে জন-কতক নৌকার মাঝি তক-বিতক করিতেছে । একজন কহিল, “তই ত এর কিছ চিনিস, নে ? এর দাম কত জানিস ?" আর এক জন কহিল, “এর আবার দাম কি ? তই আমার সঙ্গে যাস, তোর যত খণেী, আমি তোকে এমনি পাথর দেবো।" তৃতীয় এক ব্যক্তি কহিল, “ওর দান থাকক আর না-থাকক, সোনার দাম ত আছে ?” দ্বিতীয় ব্যক্তি পনধবার কহিল, "এ ত সোনার না। বড়মানষে কি আজকাল সোনা পরে ?" প্রথম ব্যক্তি কহিল, "বড়মানুষে পিতলের গয়না পরে, আর তোর ঘরে সব সোনার গয়না, না ?" দ্বিতীয় ব্যক্তি কহিল, "আমার বাড়ী সোনার গয়নাই ত ? তার আর মিথ্যা কথা কি ? বড়মানষে পেতল পারলে লোকে বলে সোনা, কিন্তু আমরা যদি মোহর গলায় গে'থে দি, তব লোকে বলে পেতলের মোহর ।" যাহার সেই সোনা ও পাথরটি, সে কহিল, “আচ্ছা, তোমাদের গোলযোগে কাজ নাই । আমার জিনিস, আমাকে দাও । সোনা হয় আমার থাকবে, পেতল হয়, তাও আমার থাকবে ।" প্রথম ব্যক্তি কহিল, “আমি বল্লাম ঠিক । এর দাম ঢের টাকা । বিশ্বাস না হয়, চল—ঐ একটি ভদ্রলোক শয়ে আছে । ওর কাছে জিজ্ঞাসা করি।" সকলেই তাহার কথায় সায় দিয়া, গোপালের নিকট আসিয়া, তাঁহার হস্তে একটি আংটি দিয়া কহিল, “মহাশয়, এ আংটিটির কি দাম আপনার পছন্দ হয় ?" গোপাল আংটিটি হাতে পাইয়া উঠিয়া বসিলেন, পরে আগ্রহসহকারে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ আংটি তোমরা কোথায় পেলে ?" গোপালের চক্ষ হইতে যেন জ্যোতি বাহির হইতে লাগিল । পরে মতের মতন ছিলেন, হঠাৎ যেন তাঁহার দেহে উৎসাহ বন্ধ ন হইল। আংটিটি বর্ণলতার, গোপাল দেখিয়াই চিনিতে পারিয়াছেন । নাবিকেরা তাঁহার আগ্রহাতিশয্য দেখিয়া চপ করিয়া রহিল। যাহার আংটি, সে কহিল, “মশাই, কাল সন্ধ্যার পর আমি দটি মন্ত্রীলোককে পার করে দিয়েছিলাম। তাদের পয়সা ছিল না। পয়সার বদলে আমারে এই আংটি দিয়েছে ।"