পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চচত্বাবিংশ পরিচ্ছেদ : ১৭৩ হইতে লাগিল, "এমন উপাধান পাইলে যাবজ্জীবন মচ্ছিত হইয়া কাটাইতে পারি।” আবার ক্ষণকাল পরে গোপাল চক্ষ মেলিলেন। সবণলতা আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন কেমন আছ ?" গোপাল অতি অনিচ্ছাপৰব’ক আস্তে আস্তে মস্তক উঠাইয়া কহিলেন, “আমি ভাল হইছি। কিন্তু তুমি এখানে কেমন করে এলে ?" সবণলতা কহিলেন, “এখন তুমি সে কথা শুনতে পারবে না ; একট পরে বলবো।" এই বলিয়া বৰ্ণলতা তথা হইতে উঠিয়া গেলেন। একট পরেই পুনরায় গোপালের নিকট আসিয়া তাঁহাকে সমভিব্যাহারে লইয়া গমন করিলেন । সবণ’ বহ দিবস গোপালকে দাদা বলিয়া ডাকা ছাড়িয়াছেন । গোপাল মনে করিতেন, তিনি দরিদ্র বলিয়া সবণ তহিকে আর দাদা বলিয়া সমে বাধন করেন না, কিন্তু সবৰ্ণলতার জানার উপরে শয়ন করা অবধি তাঁহার সে চিন্তা দর হইয়া আর এক প্রকার চিন্তা উপস্থিত হইল। তিনি এক্ষণে আদ্যোপাত দিব্য চক্ষে দেখিতে পাইলেন । গোপালের আহলাদের আর সীমা রহিল না। সবণলতার পশ্চাৎ পশ্চাৎ গিয়া দেখিলেন, ঘরের মধ্যে সবণলতা তাঁহার জন্য জলখাবার সাজাইয়া রাখিয়াছেন । গোপালকে সবণলতা সেই জলখাবার খাইতে কহিলেন । গোপাল যৎকিঞ্চিৎ আহার করিয়া বসিলেন । সবণলতা আদ্যোপাশত আপনার ইতিহাস বর্ণনা করিলেন । সবণলতা কখন গোপালকে রাগ করিতে দেখেন নাই, কিন্তু অদ্য যখন তিনি শশাঙ্কের শঠতার কথা শ্রবণ করিলেন, তখন সবণলতা সবিস্ময়ে দেখিলেন যে, তাঁহার নেত্রদ্ধয় লোহিতবণ হইল। দন্তে দন্ত নিপেষিত হইতে লাগিল, এবং দক্ষিণ হস্ত দঢ় মটিবদ্ধ হইল। সবণলতার কথা শেষ হইলে গোপাল কহিলেন, “তকে আর আমার শশাঙ্কের মৃত্যুতে এক বিশদও দুঃখ নাই।" সবণলতা জিজ্ঞাসিলেন, “শশাঙ্কের ঘরে কি রকম ক’রে আগন লেগেছিল ?" গোপাল আরৰ্ত্তিম মুখ অবনত করিয়া কহিলেন, “শুনলাম, লুচি ভাজতে ভাজতে সেই ঘাত জলে উঠে আগুন লেগেছিল।" এই কথা বলিয়া গোপাল আপনার ইতিহাস বলিতে আরম্ভ করিলেন। সবণ লতা যেই শুনিলেন যে, পাছে হেমের পীড়া বধি হয় বলিয়া গোপাল সবণের আসন্ন বিপদের কথা তাঁহাকে না জানাইয়া নিজে সবণের উদ্ধারাথে বাহির হইয়া গেলেন, অমনি তাঁহার চক্ষ হইতে বাপবারি বিগলিত হইতে লাগিল । গোপালের বন্ধমানে গমন ও কারাবাসের কথা শুনিয়া সবণলতা পৰিবাপেক্ষা প্রবল বেগে আশ্রপাত করিতে লাগিলেন । সে রাত্রে গোপালের ও সবণের কাহারও নিদ্রা হইল না । পর-দিবস প্রাতে গাত্ৰোখান করিয়া শশাঙ্কের প্ধব দাসী ও সবণলতাকে