পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : ১৩ সেইখানেই ছিলেন । স্ত্রীলোকের সকল বল স্বামী ; সরলা এ সমস্ত বক্তান্ত স্বামীকে কিছুই জনাইতে না পারিয়া অতীত উৎকণ্ঠিতা হইলেন। কি করা কৰ্ত্তব্য, কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না। অনেক ক্ষণ চিন্তা করিয়া মনে করিলেন, আজ নিদ্রা যাই । শয়ন করিলেন, নিদ্রা হইল না । শয্যায় উপবেশন করিলেন । ভাবিলেন, অনেক ক্ষণ বসিয়া থাকিলে নিদ্রা হইবেক । কিন্তু বসিয়া থাকিয়াও কোন ফল দশিলি না । নানাবিধ চিন্তা করিয়া সিথর করিলেন, শ্যামাকে পাঠাইয়া দিয়া সবামীকে ডাকিয় আনা কৰ্ত্তব্য । শ্যামা শ্যামা করিয়া ডাকিতে ডাকিতে শ্যামা উঠিল । সরলা কহিলেন, “শ্যামা, তুই এক বার গিয়া ওদের ডেকে আনতে পারিস ?” শ্যা । কোথা থেকে ডেকে তানব ? তিনি কোথায়, কেউ কি জানে ? স। সে যাত্রার কাছে আছে । আমাকে ব’লে গিয়েছিল, আজ যাত্রা শনতে যাবে । রাত্রিকালে নিদ্রাভংগ করিয়া কাহাকে কোন কাজ করান বড় সহজ নহে । নিদ্রা তন্দ্রা ইত্যাদিতে পর্ষকেই জড়ীভত করিয়া ফেলে—শ্যামা ত দরে থাকক। আপাততঃ দই হস্ত দ্বারা চক্ষ মহজন করিয়া শ্যামা কহিল—“আমি কেমন ক’রে সেখানে যাব, আর অত লোকের মধ্যে আমাকে যেতেই বা দেবে কেন ?" স। শ্যামা, তুই আজ নতন যাত্রার কাছে যাচ্ছিস না কি ? আর কখন কী বেশী লোকের কাছে যাস নি ? শ্যা । তোমাকে ত আর কথায় পারব না। এই চললাম -এই বলিয়া শ্যাম প্রস্থান করিল। শ্যামাকে পাঠাইয়া দিয়া সরলার চিত্ত চাঞ্চল্য কিয়ৎ পরিমাণে হাস হইল । ক্ষণকাল তাহার প্রতীক্ষা করিয়া শয়ন করিলেন । প্রত্যুষের সনি্ধ সমীরণ সঞ্চালনে তাঁহার নিদ্রাবেশ হইল । সরলা নিদ্রিত হইলেন । শ্যাম যাত্রার নিকট গিয়া ক্ষণকাল এ দিকে ও দিকে অনুসন্ধান করিল, বিধকে দেখিতে পাইল না। তখন যাত্রা শুনিতে আরম্ভ করিল। হঠাৎ ষে বাজাইতেছিল, তাহার দিকে দণ্টি পড়িল ; শ্যামা দেখিল, বিধুভুষণ বাজাইতেছেন । কিন্তু কেন যে তিনি যাত্রার দলে বসিয়া বজাইতেছেন বুঝিতে পারিল না । শ্যামা তাঁহার সহিত চক্ষে চক্ষে দেখা হইবার নিমিত্ত অনেক ক্ষণ সেই দিকে চাহিয়া রহিল, কিন্তু তাহাতে কৃতকাষ" না হইয়া আবার একাগ্রমনে যাত্রা শনিতে আরম্ভ করিল। এ দিকে সরলা নিদ্রিত আছেন । নিদ্রা কি মনোহর ! রোগ, শোক, জালা, যন্ত্রণা, সকলই নিদ্রিত হইলে লোকে বিস্মত হয় । নিদ্রার ন্যায় মোহিনী শক্তি আর কাহার আছে ? দিবসে সংসার-কোলাহলে চিত্তে যে সমস্ত উদ্বেগ জন্মে, রজনীতে নিদ্রাকষণ হইলে সে সমস্ত দ্রীভত হইয়া যায়। নিদ্রার ন্যায়