পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা ঃ ২৪ রজক । না দিলে কেমন ক’রে আদায় করবো ? প্র । যদি আমার পরামশ শনিস, তবে আদায় হয় । রজক । শনবো বলন । প্র । তই কাপড় হাতে ক’রে রেখে গিয়ে বল, “আজ টাকা না পেলে কাপড় দেবো না ।" যদি দেয় ভালই, নইলে বলিস, "যে কাপড় ধোয়াবার পয়সা দিতে পারে না, তার এত বাবয়ানা কেন ? রজক । তা বললে যদি রাগ করেন ? প্র । ওর রাগে তোর ভয় কি ? যদি তাতে টাকা না পাস, যাবার বেল{ আমার কাছ দিয়া যাস, আমি তোকে আপাততঃ দু-টাকা ধার দেবো এখন । রজক প্রথমতঃ শঙ্কিত হইয়াছিল, কিন্ত প্রমদার উৎসাহবাক্যে তাহার শঙ্কা দর হইল। একে ছোট লোক, তাতে নগদ দু-টাকা ধার পাইবার আশা রহিল । রজক বাটীর ভিতর গিয়া দেখিল, সরলা বারে বসিয়া আছেন । রামধন কহিল, “এই কাপড় ত আনলাম, কিন্তু আমাকে কিছু খরচা না দিলে চলে না " • সরলা কাতর স্বরে কহিলেন, “রামধন, তুমি আজ যাও, রাজবাটীতে উনি আজ যাবেন, সেখানে নিশ্চয় কিছু পাবেন । কাল তুমি এলে কিছু খরচ পাবে ।” রামধন । আজ আমার নইলে নয় । সরলা । রামধন, আজ হাতে কিছু ছিল না বলে আমাদের সকালে খাওয়া হয় নাই, থাকলে কি তোমার সঙ্গে মিথ্যা কথা কই ? সরলার হাতে দু-গাছা পিতলের বালা ছিল । রজক তাহা সবণ মনে করিয়া কহিল, “যার পয়সা অভাবে খাওয়া চলে না, তার হাতে আবার সোনার গয়না কেন ?" রজকের কথা শুনিয়া সরলার মুখ চোখ লাল হইল, কিন্তু তখনই ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিলেন, “রামধন ! সেই আশীব্বাদ কর যে, হাতের বালা সোনার হউক । সোনা কি আর আছে ? একে একে সকল বিক্ৰী হয়েছে। এ দু-গাছি পিতলের " এই কথা কহিতে কহিতে সরলা আর চক্ষের জল রাখিতে পারিলেন না, অঞ্চল দিয়া চক্ষ পুছিয়া ফেলিলেন । রজক দীঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কাপড়খানি রাখিয়া তথা হইতে আস্তে আস্তে চলিরা গেল । যাইবার বেলা আর প্রমদার কাছে গেল না । ধোপা চলিয়া যাইতে না যাইতে শ্যামা পাড়া হইতে "কৈ গা, ছোট গিন্নী কি করছো ?” বলিতে বলিতে আসিয়া উপস্থিত হইল । সরলা কহিলেন, “শ্যামা, তোর কি হিসেব কিতেব নেই ? অত চে'চাচিছস, এখনি গোপাল জাগবে ।" শ্যামা কহিল, "জাগলেই বা, দিনে ঘুমান কেন ?”