পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ : ৩১ ঘোষের ছেলে আমি । আমরা দেবনাথ বোসের প্রজা ।" নীলকমলের বেশী কথা কহা একটা রোগ ছিল । বিধ ভাষণ তাহার কথা শনিয়া তাহার বধির দৌড় টের পাইলেন। আরও অধিক কথা শনিবার জন্য জিজ্ঞাসা করিলেন, “দেবনাথ বোস কে ?” নীলকমল বিস্ময়াত্মক স্বরে কহিল, “দেবনাথ বোস কে ?” তাহার বিশ্বাস ছিল, দেবনাথের মতন ধনী আর দ্বিতীয় নাই । বিধ । হাঁ, দেবনাথ কে ? আমি ত জানি না। নীল । দেবনাথেরা আগে রাজা ছিল । বগীর হ্যাংগামে রাজত্তি যায়, কিন্ত: এখনও তাঁরা খুব বড় মানুষ। তুমি তাঁদের নাম শোন নি, এ আশ্চয" কথা । বিধ “হবে” বলিয়া চপ করিলেন । নীলকমল অনেক ক্ষণ হকা টানিয়া, হ:কাটির মুখ বাম হস্ত দ্বারা পরিকার করিয়া দক্ষিণ হস্ত দ্বারা বিধভষেণের দিকে ধারণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “তোমরা আপনারা ?” বিধভষেণ হাসিয়া কলিকাটি লইয়া কহিলেন, “আমরা ব্রাহ্মণ ।” বিধভাষণ তামাক খাইতে খাইতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কোথায় যাচ্ছ ?” নীলকমল উত্তর করিল, “আর কোথায় ! পয়সার চেণ্টায় । দুঃখের কথা কি কবো ? আমরা তিন ভাই, আমার দাদার নাম কেটেকমল, আর ছোট ভাইয়ের নাম রামকমল । তারা কিছুই করে না । সকলেই আমি যা আনবো, তাই খাবে। একা মানুষ, জাতব্যবসায়ে আর সংসার চালাতে না পেরে এখন বিদেশে বেরয়েছি । দেখি, বিদেশে টাকা আছে কি না !” নীলকমলের কথা শুনিয়া বিধর পক্ষে হাস্য সম্বরণ করা অতি কটকর হইল । কিন্ত নীলকমল দুঃখ করিয়া যাহা বলিতেছে, তাহাতে হাসা অনুচিত মনে করিয়া কহিলেন, “বিদেশে টাকা অাছে কি না দেখতে চাও, কিন্ত দেখতে পাবে যে, তার প্রমাণ কি ?" নীলকমল দক্ষিণ হস্ত দ্বারা বেহালাটি উঠাইয়া বিধ ভাষণকে দেখাইয়া কহিল, “গণ ! গণ না থাকলে বলি ? “সতাদজীর আশীবাদে আমার আর অন্নচিন্তা নাই । এখন বড়মানুষ হওয়াই বাকি ?" বিধ মনে করিলেন, হ’তেও পারে, নীলকমল একজন ভাল বেহালাদার, কিন্তু কথাবাত্ত শনে ত তার কিছুই বোধ হয় না। একবার পরীক্ষা করা যাউক । পরে প্রকাশ্যে কহিলেন, "একবার বাজাও দেখি ?" নীলকমল অবিলম্বে বেহালাটি খলিয়া দুই চারি বার তাহার কান মোড়া দিয়া বাজাইতে আরম্ভ করিল। মাথা এমনি দলিতে লাগিল যে, বিধরে বোধ হইতে লাগিল, নীলকমলের মাগী রোগ উপস্থিত হইল, চক্ষ ঘুরিতে লাগিল, এবং সর্বশরীর কাঁপিতে লাগিল । অতি কন্টে হাস্য সম্বরণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি গাইতে পার ?" নীলকমল “হাঁ" বলিয়া বেহালার গত ছাড়িয়া দিয়া গান ধরিল এবং বেহালার