পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৩২ সঙ্গে সঙ্গে নিজেও আরম্ভ করিল— “পদমআখি আজ্ঞা দিলে পদ্মবনে আমি যাব, আনিয়ে নীল পদ্ম সে নীল পদ্ম চরণপদ্মে দিব ।" গান শনা দরে থাকক, নীলকমলের হাবভাব মুখভৰগাঁ দেখিয়া বিধ আর হাসি রাখিতে পারিলেন না । নীলকমল তদশ"নে রাগত হইয়া গীতবাদ্য বন্ধ করিয়া কাহল, "দাদাঠাকর বলেছিল--নীলকমল, বেণাবনে মঞ্জা ছড়াইও না।’ তোমরা এর কি বুঝবে ? থাকতো যদি ওস্তাদজী, কি কালীনাথ দাদা, তবে তারা বুঝতে পারতো । ছেলে মানুষের মত হাসলে হয় না । গোবিন্দ অধিকারী আমাকে দশ টাকা মাইনে দিতে চেয়েছিল, আমি যাই নি । কত খোশামোদ, তব না।” প্রথম প্রথম নীলকমলের বেহালার হাত মন্দ ছিল না । গোবিন্দ অধিকার । মনে করিয়াছিল, ভাল শিক্ষা পাইলে নীলকমল ভাল হইতে পারে ; এ জন্য পাঁচ টাকা বেতন দি: নিজের সঙ্গে রাখিতে ইচছা করিয়াছিল । নীলকমল তদবধি মনে করিল, সে একজন তানসান হইয়াছে । আর কাহাকেও তৃণজ্ঞান করিত না । খে সকল বোল শিখিয়াছিল, তাহার মধ্যে নিজের টিপনি প্রবেশ করাইল, মাথ, কপিান ধরিল, মাদ্রাদোষ সংগ্রহ করিল এবং অন্যান্য নানা কারণ প্রযুক্ত অলপ দিনের মধ্যেই একজন অসহনীয় বাদ্যকর হইয়া উঠিল । গোবিন্দ অধিকারী যে নীলকমলকে সঙ্গে রাখিতে চাহিয়াছিল, সেই নীলকমলের শনি হইল । নীলকমল তদবধি লেখাপড়াকে তুচছ জ্ঞান করিতে লাগিল । "লেখা কি ?" নীলকমল কহিত, *লেখা কলম দিয়া আকর ( অক্ষর ) বের করা, আর বাজনা কাঠের ভেতর থেকে কথা বের করা । লেখা ইচ্ছা কলে সকলেই শিখতে পারে, কিন্ত বাজনা শিখতে মা-সরস্বতীর বিশেষ করণ চাই ।” এই অবধি সে জাতীয় ব্যবসায় ত্যাগ করিল। পৰেব সন্ধ্যার পর একটু একটু ধ।জাইত, গোবিন্দ অধিকারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়াবধি সমস্ত দিন বেহালা ভিন্ন আর কিছুই নীলকমলের হাতে দেখা যাইত না। কৃষ্ণকমল পাড়ার লোকের গাভী দোহন করত এবং প্রতি গরতে দুই আনা বেতন পাইত । যে দিন বেতনগুলি অনিয়া বাটী রাখিত, নীলকমল অবিলম্বে চুরি করিয়া লইয়া একটি নতন বেহালা কিনিত । উপায়ান্তর না দেখিয়া কৃষ্ণ নীলকমলকে বাটী হইতে বহিস্কৃত ফার.. দেয় । নীলকমল গমনকালে বলিয়া গেল, “তোরা মড়ী মিশ্রীর সমান দর কালে। কিন্ত আমি যে কত বড় একটা লোক, তা তোরা টের পেলি নে, এই দুঃখ ভাল, আমি চললাম, ফিরে এলে তোরা যদি আমার দনুসারে বসে কাঁদিস, তবু এক মনটো অন্ন দেবো না ।" বিধভষেণ নীলকমলকে সাতনা করিবার জন্য জিজ্ঞাসা করিলেন, "তোমার বিবাহ হয়েছে নীলকমল ?” নীলকমল অতি অহঙ্কার সত্ত্বেও মন্দ লোক ছিল না, এ জন্য একট হাসিয়া উত্তর করিল, “না, একটা সম্বন্ধ পিথর ক’রে দিতে পার ?”