পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ : ৩৩ বিধ । চেষ্টা না করলে কেমন করে বলবো। কিন্ত আপাততঃ আমি কোথায় যাচ্ছ ? নীল । কলিকাতায় গোবিন্দ অধিকারীর কাছে যাচ্ছি । সে চার পাঁচ বছর হ’ল, আমাকে দশ টাকা ক’রে মাইনে দিতে চেয়েছিল । তার পর আমি কত শিখিছি। দু-এক সময় ওস্তাদজীও আমার কাছে এখন লজ্জা পান। এখন বিশ টাকা না হয়, পনের টাকা ত পাবই । তার পাঁচ টাকা খাব আর দশ টাকা বাঁচাব । এক বৎসরের মধ্যেই বিয়ে করতে পারবো না ? বিধভাষণ নীলকমলের প্রফলতা দশন করিয়া প্রথমতঃ আহ্নাদিত হইলেন । মনে করিলেন, পাগলের মনে সদাই সুখ বলে, তা বড় মিথ্যা নয় । এর অবস্থা আমার মতনই দেখছি, বেশীর মধ্যে আমি যথার্থই ভাল বাজাইতে পারি, এ নিজ'লা মাখ, তব কলিকাতায় গেলেই ১৫ টাকা বেতন পাইবে ইহার দঢ় বিশ্বাস আছে । হায়! আমি যদি এর মতন চিন্তাশন্যে হইতে পারিতাম। কিন্ত আবার এই ভাবিয়া দুঃখিত হইলেন—নীলকমল দেখিতেছি কখনই বাটীর বাহির হয় নাই । নৈরাশ কাহাকে বলে জানে না । ইহার যে চাকরি হইবে, এ বনের অগোচর । যখন জানিতে পরিবে যে, চাকরি হইল না, তখন আর এর দুঃখের সীমা থাকিবে না । ক্ষণকাল এই প্রকার চিন্তা করিয়া বিধ্যভাষণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “নীলকমল, তুমি আর কখন বিদেশে গিয়েছিলে ?" নীলকমল কহিল, “না ।" বিধভষেণ জিজ্ঞাস করিলেন, “তুমি কেমন ক’রে তবে একা কলিকাতায় যাবে, কে রামত ব’লে দেবে ?" নীল । রাস্তার লোকে রাস্তা ব'লে দেবে ! কনের জল, জল দিলে বেরোয় । বিধভষেণ মনে করিলেন, আমি একাকী, ইহাকে সঙ্গে লইলে হয়, কিন্ত নিজের খরচের অপ্রতল ইহাকে আবার খেতে দিতে হ’লে ত যাতে পাঁচ দিন চলবে, তা দু-দিনে শেষ হয়ে যাবে । কিয়ৎকাল ভাবিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “নীলকমল, তুমি যে কলিকাতায় যাবে, কিছু খরচপত্র এনেছ ?” নীল । খরচপত্রের মধ্যে এই বেহালা । সকলেই ত আর তোমার মতন বাজনা শনে হাসে না। রাস্তায় যদি এক জন গণী লোক পাই ত এক-দণ্ডে পাঁচ দিনের জোগাড় ক’রে নিতে পারবো । যে পদ্মঅখির গানটা শনে তুমি হাসলে, কত লোক উই শনে কে’দেছে । বিধ । আমি ত তোমার গানে হাসি নাই । তোমার মাথা-নাড়া দেখে হাসি এলো । নীল। যদি তুমি গান বাজনা জানতে, তবে অমন কথা বলতে না। তালের সময় তাল না দিয়ে কি কেউ থাকতে পারে ? গাইয়ে বাজিয়ে লোকের সঙ্গে দেখা হ’লে জিজ্ঞাসা ক’রে দেখো । বিধ । তা জিজ্ঞাসা করা যাবে। কিন্তু আমি আর এক কথা ভাবছি। aবর্ণলতা-৩