পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দশম পরিচ্ছেদ : ৩৫ মদীর সী। গরটা গাছতলায় রেখে তোমাকে ঘরে জায়গা দেবো? আমি আমার গরষ্ঠাকর এলে আর কি ? বিদেশে আসতে শিখেছ, গাছতলায় শতে শেখ নি ? নীলকমল বড় অভিমানী ছিল, সতরাং মদীর স্ত্রীর কথা শুনিয়া সহজে তাহার রাগ হইল । বিধকে সম্বোধন করিয়া কহিল, "চল আমরা গাঁয়ের ভিতর কোনখানে থাকি এখানে থাকা হবে না।” বিধ পথশ্রান্তিতে কাতর ছিলেন, তিনি কহিলেন, “তুমি যাও, আমি এইখানে থাকি।” - নীলকমল আরও রাগত হইয়া কহিল, “থাক, তবে আজও থাক, কালও থাক । আমি এই বিদায় । আর তোমার সঙ্গে দেখা হবে না।" এই বলিয়া নীলকমল প্রস্থান করিল, বিধ ঘরে উঠিয়া বসিলেন । নীলকমল কিয়ন্দর গিয়া থামিল । তাহার বিশ্বাস ছিল, একট রাগ করিয়া গেলেই বিধভৰণ তাহাকে ডাকিবেন । বিধরেও ডাকিবার ইচছা ছিল, কিন্ত নীলকমলের চরিত্র তাঁহার পর্বে জানা ছিল, এ জন্য তিনি নিশ্চিত হইয়া বসিয়া ছিলেন যে, নীলকমল আপনিই ফিরিয়া আসিবে । বস্তুতঃ তাহাই ঘটিল। নীলকমল ক্ষণকাল এক থানে স্তম্ভিত হইয়া থাকিয়া ভাবিতে লাগিল, পুনৰবরি না ডাকিলে কি প্রকারে যাই । রাত্রি অন্ধকার, অন্য কোন ভয় না থাকিলেও যে কেহ সে রাস্তায় চলিতে পারিত, তাহা নিতান্ত অসম্ভব । গ্রামের লোকেরই সে রাস্তা দিয়া বিনা আলোকে চলা দুঃসাধ্য। নীলকমল ভাবিয়া চিন্তিয়া দু-এক পা করিয়া পনবার দোকানের উঠানে আসিয়া দাঁড়াইল । বিধকে ডাকিয়া কাঁহল, "রান্তিকালে তোমাকে একা ফেলে যাওয়া অন্যায়, তাই ভেবে আমি ফিরে এলাম। তমি ঘরে থাক, করি কি,আমি গাছতলায় থাকবো।" কিন্তু নীলকমলের মনে মনে এই রহিল যে, হয় উভয়েই গাছতলায় থাকিবেক, নচেৎ সমস্ত রাত্রি গান করির কাটাইয়া দিবে, অথাৎ কাহাকেই ঘুমাইতে দিবে না। বিধভষণের বসত্ৰাদি তদশ পরিকার পরিচ্ছন্ন ছিল না, এ কথা পাবেই উল্লেখ করা গিয়াছে । যে দোকানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন, সেখানে তাঁহার পবে আর দুইটি ব্রাহ্মণ আসিয়াছিল, তাহাও বলা হইয়াছে। সে দুইটি, ব্রাহ্মণের বসত্ৰাদি অতি পরিকার পরিচছন্ন ; কথোপকথনে টের পাইলেন, তাহারা কলিকাতায় কলেজে অধ্যয়ন করে । শীতের বন্ধের পর পনবার কলিকাতায় যাইতেছে । মদীর সন্ত্রী কায়মনোবাক্যে তাহদের পাক শাক ইত্যাদির তদ্বির করিয়া দিতেছে । বিধার কথা বড় শোনে না । দু-বার তিন বার না চাহিলে একট: তামাক কিবা জল দেয় না । কোথা পাক করিবেন জিজ্ঞাসা করায় উত্তর করিল, “ঐ গোতা আছে, ঘরের ঐ কোণে একটা উন্ন কাট, ঐ মাচার উপর হাঁড়ি আছে, একটা নেও, আর ঐ বারাডায় কাঠ আছে, এনে রাঁধা-বাড়া কর।” এই বলিয়া মদীর স্ত্রী অপর দু-জন ব্রাহ্মণের জন্য হাঁড়ি, জল, কাঠ ইত্যাদি আনিয়া क्रिढन !