পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৩৮ বিধ পাকশাকের চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন ও নীলকমল ঘন ঘন করিয়া “পদ্মঅখি আজ্ঞা দিলে" ধরিল । ব্রাহ্মন্বয় আস্তে আসেত স্থানান্তরে চলিয়া গেলেন । ব্রাহ্মন্বয় চলিয়া গেলে নীলকমলেরও ঘরের মধ্যে স্থান হইল। বিধভাষণ রন্ধন করিলেন। উভয়ে আহারাদি করিয়া শুইলেন । বিধভষণ আর কখন বাটীর বাহির হন নাই। নতন স্থান ও বাটীর ভাবনা প্রযক্ত তাঁহার ঘমে হইল না । নীলকমল শয্যায় শয়ন করিবা মাত্রই নাসিকাধনি করিয়া নিদ্রা যাইতে লাগিল । একে দোকান-ঘর, চারি দিকে খোলা, তাহাতে সম্মুখে কতকগলা প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড গাছ, আবার রাত্রিকাল, সমুদায় নিন্তব্ধ । গাছের পাতার একট একটা শব্দ হইলেই যেন দশগণ হইয়া বিধার কানে প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। ঘরের মধ্যে ইন্দরগলা কিচ কিচ করিয়া এ-কোণ ও-কোণ করিতে লাগিল। চামচিকাগলো উড়িতে আরম্ভ করিল। বিধর কিঞ্চিৎ ভয়ের সঞ্চার হইল—“নীলকমল” “নীলকমল” করিয়া ডাকিতে ডাকিতে নীলকমল কহিল, “তুমি যে আমাকে বিরক্তই কলে।” বিধভাষণ কহিলেন, “নীলকমল, একবার তামাক খাও ! অত ঘমেচ্ছ কেন ? বিদেশে, বিশেষ রাস্তায় বেশী ঘর্মান ভাল নয়।” “বিদেশে রাস্তায় অত ঘুমান ভাল নয়। কেন, মন্দই বা কি ? আমার কি আছে যে চোরে নিয়ে যাবে ?" বিধ কহিলেন, “তা নয় নীলকমল ! আমিও বিদেশে এসেছি। কিন্তু তোমার একটা গণ আছে, অনায়াসে দুটাকা করতে পারবে, কিন্তু আমার ত কোন গণ নাই । যদি তুমি বেহালাটা আমাকে শেখাও, তা হ’লে তোমার কাছে চিরকাল কেনা রব ।” নীলকমল বেহালা ও গানের নামে জল হইরা যাইত। প্রফলচিত্তে কহিল, “হাঁ শেখাব, তার ভাবনা কি ? আজই কি আরম্ভ করবো ।” * “শুভস্য শীঘ্ৰং ।” বিধভাষণ কহিলেন, “যা শেখা উচিত, তা এখন আরম্ভই ভাল।" নীলকমল বেহালাটি লইয়া দুই-চারি বার তাহার কান মোড়া দিয়া আরম্ভ করিল। কহিল, “আমি যেমন বাজাই ও গাই, তুমি আগে নিপুণ হয়ে শোন ; পরে তুমি শিখতে পারবে।” এই বলিয়া নীলকমল "পদ্মঅfাখি" ইত্যাদি আরম্ভ করিল, বিধভাষণও ঘনমাইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন ।