পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ পরিচ্ছেদ : ৩৯ একাদশ পরিচ্ছেদ হেম ও স্বর্ণলতা বদ্ধমান জেলার বিপ্রদাস চক্ৰবত্তী একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁহার পৈতৃক সম্পত্তি অধিক ছিল না বটে, কিন্ত ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ সময়ে তিনি কমিসারিয়েটে কম করিতেন । এই কাৰ্য্যই তাঁহার শ্ৰীবধির মাল। নতন বড়মানুষ হইলে প্রায়ই কৃপণ হয় ; কিন্ত বিপ্রদাসের সে দোষটি ছিল না। তাঁহার সদ্ব্যয় যথেষ্ট ছিল । দেবসেবায় ও অতিথিসেবায় তাঁহার অনেক টাকা ব্যয় হইত। বাটীতে কোন পাবণ ফাঁক যাইত না । দোল দাগোৎসব ইত্যাদিতে তাঁহার যৎপরোনাসিত আস্থা ছিল । সংক্ষেপে তিনি একজন যথাথ “সেকেলে” ধামিক ছিলেন। অথাৎ অথ” উপাজনের সময় কত্তব্যাকৰ্ত্তব্য বিবেচনা করিতেন না । এ টাকা লওয়া উচিত নয়, এ টাকা লইলে ক্ষতি নাই, এরপে কোন চিন্তা করিত্রেন না। টাকা পাইলেই গ্রহণ করিতেন । এবং ঐ অর্থ দেবসেবা ইত্যাদিতে ব্যয় করিতে পারলেই সাথ’ক উপহজন জ্ঞান করিতেন । তাঁহার সহধৰ্ম্মিণীর পরলোক হওয়া অবধি বিপ্রদাস কায্য পরিত্যাগ করিয়া বাটীতেই থাকিতেন । তাঁহার একটি পরে ও একটি কন্যা, পত্রটির নাম হেমচন্দ্র, কন্যাটির নাম সবৰ্ণলতা । তাঁহার ন্যায় অপত্যুবৎসল লোক সচরাচর দেখা যায় না। প:জার সময় গ্রামপথ যাহারা যাহারা বিদেশে থাকে, সকলেই বাটী আলিয়াছে । হেম বাড়ী আসিয়াছে । মা নাই বলিয়া পাছে আদরের ত্রুটি হয়, এ জন্য বিপ্রদাস নিজে দ-বেলা আহারের সময় হেমের কাছে বসিয়া থাকেন । তাঁহার মাতাকে কহেন—বিপ্রদাসের মাতা অদ্যাপি জীবিত আছেন—“মা, তামি তোমার যেমন আদরের জিনিস, হেমও আমার কাছে তেমনি । যখন যা চায়, হেমকে তখনই তাই দিও।” এক দিবস বিপ্রদাস সবণকে দেখিতে না পাইয়া তাঁহার মাতাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা, আজ আমার স্বণ কোথায় ? তাকে দেখছি না কেন ?" সবণ পাশের ঘরে ছিল । পিতার মুখে তাহার নাম শুনিয়া দৌড়িয়া হস্ত প্রসারণপবেক তাঁহার নিকটে আসিল । কহিল, “এই যে বাবা! আমরা মাঝের ঘরে ছিলাম ।” বিপ্র । এস, মা এস। আমার লক্ষী মা এস । এ কি মা, সমস্ত হাতে মুখে কালি মেখেছ কোথা থেকে ? সবণ । আমি দাদার কাছে লিখতে শিখছিলাম, দাদা আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছিল । বিপ্র । তুমি লিখতে শিখছো । তোমার লেখায় দরকার কি ?—এই বলিতে বলিতে হেমও তথায় আসিল ।