পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : ৪১ ঠাকরণদিদি না কি তেল নতুন চরি করেন, ঠাকরণদিদি কালো, ঠাকরণদিদি অপরিকার। প্রমদা এ সকল কথা কি ঠাকরণদিদির মখের উপর বলিতেন ? তা নয়। মুখের উপর বলিলেই ঠাকরণদিদি হাঁড়ি কড়ি ফেলিয়া চলিয়া যাইবেন, প্রমদা তাহা বিলক্ষণ জানিতেন । এ জন্য পাড়ার অন্যান্য লোকের সহিত এ সমস্ত আলাপ হইত এবং তাহারা অবিলম্বেই এ সমদায় কথা ঠাকরণদিদিকে কহিত । ঠাকরণদিদি এক দিন মুখ ভার করিলেন । পরদিন দুই একটি অসন্তোষের কথা কহিলেন । ততীয় দিবস প্রমদার সহিত সম্মুখ-যন্ধ করবেন ঘোষণা করিয়া দিলেন । কেনই বা না করিবেন ? তিনি ত সরলার ন্যায় পরাধীনা নন। পরদিবস বৈকালে মহা ঝগড়া উপস্থিত হইল। প্রমদাও চুপ করিবার লোক নন, ঠাকরণদিদিও নন । একজন অপরকে পরাস্ত করিবারও জো নাই। উভয়েই কলহবিদ্যাবিশারদ । ঠাকরণদিদি অনেক ক্ষণ ঝগড়ার পর দ-হাতের দটি বন্ধাংগলি প্রমদার মুখের কাছে লইয়া গিয়া কহিলেন, “আমি তোর দাসী, না তোর রাঁধুনী যে, যা মনে আসছে, তই তাই বলচিস, এই থাকলো তোর বাড়ী-ঘর, আমি চললাম । তই রোধে খাস আর না খাস, তোরই ইচ্ছা, আমার কি—” এই বলিয়া ঠাকরণদিদি শশিভষেণের বাড়ী ত্যাগ করিলেন । প্রমদা কখন সমকক্ষ লোকের সহিত কলহ করেন নাই । সুতরাং এত দিন পরাস্তও হন নাই । আজ এই প্রথম সন্মুখ-যন্ধে পরাভত হইলেন। ঠাকরণদিদি চলিষা গেলে অনেক ক্ষণ পয্যন্ত প্রমদা একাকিনী গহে বসিয়া রোদন করিলেন । পরে চক্ষ মাজ’ন করিয়া বাহিরে আসিলেন । আজকার বিবাদে অভিমান খাটিবেক না, এ জন্য নিজ হস্তেই গাহের কাজকর্ম’ করিতে লাগিলেন । - শশিভাষণ নিদিষ্ট সময়ে বাটী আসিলেন । সন্ধ্যাহিক করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঠাকরণদিদি কোথায় ?” প্রমদা উত্তর করিলেন, “ঠাকরণদিদিকে তাড়িয়ে দিয়েছি।” ঠাকরণেদিদি নিজেই চলিয়া গিয়াছেন বলিতে প্রমদার কোন মতেই ইচছা হইল না, বস্ততঃ তাহাই সত্য । শশিভাষণ কহিলেন, "কেন, ঠাকরণদিদির অপরাধ ?” প্রমদা যাহা মনে আসিল, তাহাই বলিলেন । বিধ ভাষণকে পৃথক করিয়া দিবার সময় ঠাকরণদিদি বড় ভাল মানুষ ছিলেন, বিস্ত দশ দিন না হইতে হইতেই ঠাকরণদিদির এতগুলি দোষ উপস্থিত, শনিয়া শশিভাষণ কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “তুমি কখন কারে সবগে তোল, আর কখন কারে নরকে ফেল, টের পাওয়া ভার। এখন দেখতে পাচ্চি, না খেয়ে মরতে হবে । তোমার ব্যাম, তুমি পারবে না ; আমারও রাঁধবার শক্তি নাই ! এখন উপায় ?” প্রমদা কহিলেন, “সে জন্য তোমার ভাবনা কি ? তোমার ত সময়ে আহার হ’লেই হয় ।”