পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৪৬ বাটীর সমাচার জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন । গদাধরচন্দ্র ক্ষণকাল বসিয়া বাটীর চত দিক পরিভ্রমণ করিতে প্রবত্ত হইলেন । গদাধরচন্দ্র যে বাটীতে থাকেন, সেখানে কোন দ্রব্য গোপন করিয়া রাখিবার জো নাই । তাঁহার চোখ তাহাতে পড়িবেই পড়িবে ; বিশেষ যদি খাবার জিনিস হয় । শশিভষেণ মনে মনে যার-পর-নাই বিরক্ত হইয়া কাছারি চলিয়া গেলেন । প্রমদা "ষোড়শোপচারে” আহারের বন্দোবসত করিতে লাগিলেন । প্রমদার জননী পাকশাক করিয়া উচিত সময়ে আহার করিলেন । বাটীর অন্যান্য সকলেরও আহার হইয়া গেল । শশিভষেণ এই অবধি আপনার বাটীতে আপনি পরাধীনের ন্যায় কালযাপন করিতে লাগিলেন । গদাধরচন্দ্রের মাতা বাটীর এক মাত্র কত্রীস্বরুপ হইলেন । গদাধরচন্দ্র সকলে বিদ্যাভ্যাসের কারণ ভৰ্ত্তি হইলেন । প্রমদা পরম সমাদরে সকলকে আহারাদি করাইতে লাগিলেন ; কি জানি, ত্রটি হইলে পাছে লোকে নিন্দা করে । ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ সরলার বিরহ, গ্র্যামার বিক্রম কোন সবিখ্যাত গ্রন্থকত্তা বলিয়াছেন, মত্যকালে যে মহাবিরহ ঘটিবেক, তাহাই মনে হয় বলিয়া আমাদের সামান্য বিরহে কষ্ট বোধ হয়। এ কথা সংগত বটে। নচেৎ দুঃখের ত কোন কারণই নাই । জানিতে পারিতেছি, আমার ভাই বন্ধ আজ বাটী হইতে যাইতেছে, আবার প্রয়োজন সমাপ্ত করিয়াই প্রত্যাগত হইবেক । কিন্তু তথাপি যে মন প্রবোধ মানে না, তাহার কারণ, সেই মহাবিরহের ভয় ভিন্ন আর কিছুই নহে । যখন কেহ আমাদের নিকট হইতে বিদায় লইয়া যায়, তখনই যে আমরা মত্যচিন্তা করিয়া থাকি এমন নহে; কিন্ত তাহা না করিলেও বিরহবেদনার যে সেই মলে কারণ, তাহা নিশ্চয় । তুমি কাহাকে পাঁচ টাকা দান করিলে তোমার কোন কট বোধ হয় না ; তোমার দশ টাকা হারাইয়া গেলেও তোমার বিশেষ দুঃখ হয় না, কিন্ত বাজারে যদি চারি পয়সার জিনিস কিনিতে তোমার নিকট হইতে ঠকাইয়া ছ-পয়সা লয়, তাহাতে তোমার মন্মতিক কস্ট বোধ হয়। কেন ? কারণ, তোমার মনে হয়, তোমা অপেক্ষা দোকানী অধিক চতুর, অধিক বধিমান । লোকে নিজের নানতা স্বীকার করিতে চায় না। ঠকিয়া আসিলে নিজের নানতার পন্টাক্ষরে পরিচয় দেওয়া হয়, এবং সেই জন্যই এত মনঃকট হয়। কিন্ত ঠকিয়া আসিলে কি কেহ এরপ তক করিয়া থাকে ? ইহা হইতেই জানা যাইতেছে যে, আমাদের অনেক সময় অনেক ভাবের উদয় হয়, যদিও তত্ত্বৎ সময় সে ভাবের কারণ আমরা সম্যক্রপে টের পাই না, অথবা অনুসন্ধান করিয়া দেখি না ।