পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : ৪৭ বিধতষণ বাটী হইতে চলিয়া গেলে সরলার যৎপরোনাতি কষ্ট হইতে লাগিল । মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, "কেনই বা যাইতে দিলাম ! বাটী থাকিয়া যদি দু-জনে একত্রে উপবাস করিতাম, তাহাও এ যন্ত্রণা অপেক্ষা সহস্ৰগণে ভাল ছিল ।” আবার ভাবেন, “আমি কি সবাথপর ! আমার জন্য তিনি কট পাইবেন, ইহাও আমার বাঞ্ছনীয় মনে হইতেছে ? বিশেষ তাঁহাকে যদি অনাহাবে থাকিতে হইত, তাহাও আমি কখনই দেখিতে পারিতাম না।" কবে বিধভষণ কি মিন্ট কথাটি কহিয়াছেন, কবে অন্যান্য দিন অপেক্ষা একটা বেশী ভালবাসার চিহ্ন দেখাইয়াছেন, সরলার মনে তাহই উদিত হইতে লাগিল । বিধভষেণ এক এক দিন রাগ করতেন বলিয়া সরলাব কত কষ্ট হইত, তিনি কাহারও সহিত বিবাদ করিয়াছেন শুনিলে সরলার কত দুঃখ বোধ হইত, সে সমস্ত কথা এক্ষণে তাঁহার মনে হইল না । তাঁহার কবে কি ব্যামোহ হইয়াছিল, সরলার তাহাও সমরণ হইতে লাগিল । বিদেশে যদি সেইরােপ পীড়া হয়, তাহা হইলে কে তাঁহার শশ্রেষা করিবেক ? এই সমস্ত ভাবিয়া সরলা ছাতে বসিয়া অবিরত অশ্রপাত করিতেছেন। বিধভষণকে বাটীর মুধ্য হইতে বিদায়দিয়া সরলা ছাতে গিয়া বসিয়াছিলেন। যত দর দটি চলে, তত দর অনিমেষ নয়নে তাঁহাকে নিরীক্ষণ করিলেন । বিধভাষণও দু-এক পা যান, আর ফিরিয়া ফিরিয়া ছাতের দিকে দটি করেন । ক্ষণকাল এইরপে গমন করিয়া এক অশ্বথ ব্যক্ষ তাঁহাদিগের দটি অবরোধ করিল। বিধভযণ দীঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া চক্ষ মাছিয়া ফেলিলেন। সরলা ঐ ছাতেই বসিয়া রহিলেন । একবার ইচ্ছা করিলেন, “দৌড়িয়া গিয়া এখনও ফিরাইয়া আনি, কিন্ত কি সুখভোগ করিতে আনিব ? না, আমি নিজে অনাহারে মরি, তাহাও ভাল, তবু তাঁহাকে কট দেওয়া হইবে না। দিদি, দাসী হইয়া থাকিলে যদি মুখ না করিয়া চারটি চারটি খেতে দিত, আমি তাহাও হইতে পারিতাম।” সরলা এইরুপ ভাবিতেছেন । শ্যামা গাহকৰ্ম্ম সমস্ত সমাপন করিয়া পাকশাকের আয়োজন করিয়া দিয়া সরলাকে ডাকিতে গেল । বেলা এক প্রহর হইয়াছে, তথাপি সরলার হ:শ নাই । শ্যামা নিকটে গিয়া কহিল, "বলি ও ছোটগিন্নী, আর কাররে কি সোয়ামী নেই? না আর কেউ কখন বিদেশে যায় নাই ?” শ্যামার ডাক শনিয়া সরলার চৈতন্য হইল । ত্রস্ত হইয়া অঞ্চলে চক্ষ মাছিয়া শ্যামাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “শ্যামা, কি বলছো ?” শ্যামা । কি বলবো ? আজ কি আর গহস্থদের রান্নাবাড়া হবে না ? না, তোমার খিদে নেই ব’লে আমরা সকলেই উপোস করবো ? সরলা । শ্যামা, আমার যথার্থই খিদে নেই, তুমি গিয়ে রোধে খাও, আমি আজ আর কিছুই খাব না । শ্যামা। আমি খেলে ত আর গোপালের পেট ভরবে না, সে যে পাঠশাল থেকে আসছে, এসে কি খাবে ? সরলা । এত বেলা হয়েছে ?