পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : ৬১ কখনও কথার সোজা জবাব দেয় না। একটা প্রশ্ন করিলে তৎপরিবত্তে পাঁচটা জিজ্ঞাসা করাই সে দেশের নিয়ম । নীলকমলের কথা শুনিয়া মহাজন জিজ্ঞাসা করিল, “আসচো কোয়ান্থে হে ?” নীলকমল কহিল, "কেন্টনগর থেকে।" মহাজন। আর কহন কি কলকাতায় আস নাই ? নীলকমল । তা হ’লে আর তোমাকে জিজ্ঞাসা করবো কেন ? মহাজন । যাবা কোয়ানে ? বিধভষেণের বিরক্তি ধরিয়া উঠিল । রৌদ্রে চলিয়া চলিয়া মাথা ধরিয়াছে। ক্ষুধায় গা ঘুরিতেছে । ঢাকাই মহাজনের কথা শুনিয়া বলিলেন, “আমরা যাব চলোয় ।” মহাজন বিধুভুষণের কথা শনিবা মাত্র চটিয়া উঠিয়া কহিল, "এ যে বারি বর মানৰ দেহি, যেন রাজা রাজবল্লভের নতি । যা তোরা দেহে নে গে কালীবারী, আমি তো বলম না।” বিধভষেণ । না বলে ত ব’য়েই গেল । চল নীলকমল, আমরা খুজে নিতে পারবো । আবার খানিক দর গিয়া বিধভষেণ মনে করিলেন, রাস্তার লোকের উপর বিরক্ত হইয়া নিজে কষ্ট পাওয়া অতি নিবোধের কাজ । এমন সময়ে একজন ব্রাহ্মণ, গলায় একখানা গামছা, কপালে সিন্দরের ফোঁটা, হাতে একছড়া ফলের মালা, তাঁহাদের দিকে আসিতেছে । বিধভাষণ ত হাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “মহাশয়, কালীঘাটে কোন দিক দিয়ে যাব ?” জিজ্ঞাসা করিবা মাত্র ব্রাহ্মণ চির-পরিচিতের ন্যায় বিধভষণের হস্ত ধরিয়া কহিল, “তার জন্যে ভাবনা কি ? আমার সঙ্গে এস, আমি সেইখানে যাচ্ছি ।" নীলকমল ও বিধভাষণ তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন । ব্রাহ্মণ ট মা-কালীর পাড়া । সে যে-শিকারে বাহির হইয়াছিল, তাহাই পাইয়াছে । রাস্তায় নানাবিধ মিটালাপ করিয়া বিধকে ও নীলকমলকে কালীঘাটে লইয়া গেল । বিধভষেণ ও নীলকমল প্রায় অপরাহে কালীঘাটে গিয়া পে’ছিলেন । পে'ছিয়া গঙ্গাস্নান করিতে গেলেন । নীলকমলের গঙ্গা দশন করিয়া অভক্তি হইল । বিধভষণকে কহিল, "দাদাঠাকুর, এই কালীঘাটের গঙ্গা ? এরই এত নাম ? এর চেয়ে আমাদের হাসখালির নদী ঢের ভাল, সেখানে কাদাও কম।" বিধ ভাষণ বললেন, “এই গঙ্গায় এত লোক উদ্ধার হ’ল, আর তুমি আর আমি কি হতে পারবো না ?" এইরুপ গল্পে স্নান সমাপন করিয়া উভয়ে কালীর মন্দিরে গেলেন । পান্ডাজী সঙ্গে সঙ্গেই আছেন। পথ প্রদর্শন করাইয়া লইয়া যাইতেছেন । মন্দির দেখিয়াও নীলকমলের বড় ভক্তি হইল না, কিন্তু কালী দশন করিয়া একেবারে অভক্তির পরাকাষ্ঠা হইল। "দাদাঠাকুর, দরে থেকে সব,