পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : ৬৩ নয়। কেউ গালে দিতেছে, কেউ কানে, কেউ নাকে, একজন খানিক তার চক্ষর মধ্যে দিল । মালা এতই দিয়াছে যে, নীলকমলের একপ্রকার বোঝা হইয়া উঠিল । নীলকমল ক্ৰমাগতই উচ্চৈঃস্বরে বলিতেছে, “ওগো, আমার কাছে কিছু নেই, আমাকে কেন মিথ্যা কট দাও।” অতি কন্টে বিধ ও নীলকমল গোলের মধ্য হইতে বাহিরে আসিলেন । বাহিরে আসিয়া দেখিলেন যে, একজন খোট্টাকে তাঁহাদেরই মতন আক্ৰমণ করিয়াছে। নীলকমল আর তথায় এক মহত্তও দাঁড়াইল না। "দাদাঠাকুর, ওই আবার আসছে, আমি চললাম । আর কোন শালা এখানে থাকবে”—এই বলিয়া দৌড়িয়া পলাইল । বিধুভুষণ আস্তে আস্তে আসিতেছেন। দৌড়িয়া পলায়ন কলিকাতায় সহজ ব্যাপার নহে । নীলকমলের পিছ পিছ অমনি ধর ধর বলিয়া লোক দৌড়াইতে লাগিল । নীলকমল যতই যায়, লোকের সংখ্যা ততই বধি হইতে লাগিল । খানিক দৌড়াইয়া নীলকমল আর পারিল না । তিন দিন রাস্তায় চলিয়াছে, বিশেষ সে দিন কিছুই আহার করে নাই ; একটা মোড় ঘুরিবার সময় নীলকমল পড়িয়া গেল। অমনি সকলে আসিয়া নীলকমলের চতুঃপাশেব দাঁড়াইল, কিন্তু কি জন্যে তার পশ্চাৎ পশ্চাৎ দৌড়াইয়া আসিয়াছে, কেহই জানে না । লোকে আসন্নকালে যেমন সংসারের, দয়া মায়া পরিত্যাগ করে, নীলকমল সেইরাপচিত্ত হইয়া কহিল, “দাও দাও, কত মালা আছে আর কত সিন্দর আছে দাও । একটা চোক গিয়েছে, নয় বাকি যেটা আছে, সেটাও যাবে।" নীলকমলের কথায় লোকে মনে করিল এটা পাগল, তাই ভাবিয়া একট পরে সকলে হাসিয়া চলিয়া গেল। নীলকমলের বেদনায় চক্ষে জল পড়িল, একট রাস্তার ধারে বসিয়া থাকিয়া গায়ের ধলা ঝাড়িয়া বিধভষেণের নিকট আসিতে লাগিল। কিন্তু নীলকমল আর পথ চিনিতে পারিল না। ঘুরিয়া ঘুরিয়া প্রায় সন্ধ্যা হইল, তথাপি মন্দির খুজিয়া পাইল না। ক্ষুধায় শরীরে আর সামথ্য নাই। ইটের রাস্তায় পড়িয়া গিমা শরীরে স্থানে স্থানে চক্ষম উঠিয়া গিয়াছে । এই অবস্থায় নীলকমল এক বাটীর দরজায় বসিল । একাকী বিদেশে কোথায় যাইবে, কাহার বাড়ীতে থাকিবে ভাবিয়া নীলকমল কাঁদিতে লাগিল । যে বাটীর বারে বসিয়া নীলকমল রোদন করিতেছিল, সন্ধ্যার সময় সে বাটীর বাব কাছারি হইতে বাটী আসিয়া নীলকমলকে তদবপথ দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে ?" নীলকমল কাঁদিতে কাঁদিতে উত্তর করিল, “আমি নীলকমল ৷” বাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখানে বসে কাঁদছো কেন ?” নীলকমল কহিল, “আমি হারায়ে গিয়েছি।” বাব । সে কি রে ? তুই হারিয়ে গিয়েছিস কেমন ক’রে ? নীলকমল আদ্যোপাত সমুদায় বণনা করিল। শনিয়া বাবর অত্যন্ত দুঃখ হইল। ব টাঁর মধ্যে গিয়া কাপড় ছাড়িয়া তিনি নীলকমলকে জলখাবার দিলেন।