পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৬৪ আহার করিয়া নীলকমলের শরীর প্রায় পৰ্ববৎ হইল । তখন নীলকমল মনে করিল, এই সময় একবার গণের পরিচয়টা দেওয়া যাউক । এই ভাবিয়া বাবকে কহিল, “আমি যাত্রার দলে থাকবো বলে এসেছি, ভাল বেহালা বাজাতে পারি।" বাব কহিলেন, "একবার বাজাও দেখি !" নীলকমল বেহালটি বাহির করিয়া দেখিল, চার পচি জায়গায় ভাগিয়া গিয়াছে। নীলকমলের সব বধন বেহালাটি । সেটির এমন দন্দশা দেখিয়া নীলকমলের চক্ষ হইতে ঝর ঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল । বাব জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ?” নীলকমল কথা না কহিয়া বেহালাটি বাবর সমখে রাখিল। তদশনে বাবর অত্যন্ত দুঃখ হইল। বাবা কহিলেন, “তুমি কোদো না, আমি তোমাকে একটা বেহালা কিনে দিব ।” নীলকমল কহিল, “দেবেন বটে, কিন্তু এমনটি আর হবে না।” বাব কহিলেন, “তুমি আমার সঙ্গে দোকানে যেও । দোকান থেকে তোমার যেটি পছন্দ হয়, সেটি নিও ।” নীলকমল আশ্বস্ত হইল এবং চক্ষের জল মছিয়া ফেলিল। পরে রাত্রে আহারাদি করিয়া সেই বাটীতে শয়ন করিয়া রহিল । বিধভষেণের যথাসম্ববঙ্গব এক থলির মধ্যে—সেই থলি চরি হওয়ায় তাঁহার যে পৰ্য্যন্ত দুঃখ হইল, তাহা অনিশ্ববচনীয়। নীলকমলকে সকলে তাড়াইয়া লইয়া গেল, তাহা দশন করিয়া তিনি আরও বিস্ময়ান্বিত হইলেন । মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, একাকী এখানে আসিয়া কি ককমই করা হইয়াছে। পথশ্রান্তিতে, মনোদুঃখে ও জঠরানল প্রজবলিত হওয়ায় বিধভষেণের চক্ষ হইতে দর দর করিয়া অশ্র; নিপতিত হইতে লাগিল। মনোদঃখে একাকী গংগাতীরে বসিয়া চিন্তা করিতেছেন ; এমন সময়ে তাঁহার পর্বপরিচিত পান্ডার সহিত সাক্ষাৎ হইল । পান্ডাজী পুনৰবরি শিকারে বাঁহগতি হইয়াছে । বিধুভুষণ পাণ্ডাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কোথায় গেলে তিনি চারিটি অন্ন পান। পাণ্ডা কহিল, “সে জন্য ভয় কি ? তুমি আমার সঙ্গে এস, আমি তোমাকে প্রসাদ দেবো এখন।” বিধভাষণ পান্ডার সমভিব্যাহারে আসি:া কালীর ভোগ হইয়া গেলে প্রসাদ পাইলেন । এবং সন্ধ্যার পর নাটমন্দিরের এক কোণে শয়ন করিয়া রজনী অতিবাহিত করিলেন । পরদিন প্রত্যুষে গাত্রে খান করিয়া গংগাস্নান করিলেন, পরে নাটমন্দিরের এক কোণে বসিয়া রহিলেন । অবাক-তিনিও কাহারও সহিত কথা কহেন না, অন্য কেহও তাঁহার সহিত বাক্যালাপ করিতে আইসে না । যখন বড় সমারোহ হইল, একট: এ-দিক ও-দিক চলিয়া বেড়াইলেন । ভোগ হইয়া গেলে প্রসাদ পাইলেন এবং পাবদিবসের মত নিদ্রায় রজনী যাপন করিলেন। এইরপে বিধ্যভাষণ কালাতিপাত করিতে লাগিলেন । -