পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনবিংশ পরিচ্ছেদ বিপ্রদাসের উইল হেম সবৰ্ণলতার লেখাপড়া সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন, তাহাই যথাথ ঘটিল। কাহার ও কাছে সাহায্য না লইয়া বণলতা অতি সত্বরেই পস্তেকাদি পাঠ করিতে শিখিলেন এবং হেমকে প্রতিশ্রত পত্ৰখানি লিখিলেন। পত্র পাঠ করিয়া হেমের যার-পর-নাই আহ্নাদ হইল ! বাটী আসিবার সময় তিনি একটি খোঁপার ফল খরিদ করিয়া আনিলেন এবং বাটীতে প্রবেশ করিবা মাত্রেই স্বণকে ডাকিয়া কহিলেন, “সবণ, এই তোমার পত্রের জবাব এনেছি।” সবণ* হেমের সবর শনিয়া দৌড়িয়া গহমধ্য হইতে আসিয়া হেমের হাত ধরিয়া লইয়া গেলেন। হেম ফলটি সবণের হাতে দিয়া কহিলেন, "বণ, এই নেও তোমার ফল । দেখ, আমি যা বলেছিলাম, তাই করেছি কি না ?" সবণ হেমের হস্ত হইতে হাসিতে হাসিতে ফলটি লইয়া আপনার খোঁপায় পরিলেন । হেম যখন বাটী আসিয়া পে’ছিলেন, তখন বিপ্রদাস অনুপস্থিত ছিলেন ; কিন্তু ক্ষণকাল পরেই প্রত্যাগত হইলেন । হেম বাটী আসিতেছে শনিয়া তিনি প্রায় কোন সথানে যাইতেন না । গেলেও অধিক দেরি করিতেন না । বাহির হইতে হেমের সবর শনিয়া তিনি হষেৎিফলনেত্ৰে গহমধ্যে প্রবেশ করিলেন। সবণ" পিতাকে দেখিতে পাইয়া হস্ত প্রসারণপ্ৰবক তাঁহার কাছে গেল । বিপ্রদাস আমনি সবণকে কোলে লইলেন ; সবণ কহিল, "এই দেখ বাবা, দাদা আমার জন্যে ফল এনেছে।" বিপ্রদাস গহমধ্যে প্রবেশ করিয়া এ-পর্য্যন্ত কথা কহিতে পারেন নাই । সবণের ফলে দেখিয়াও কিছু বলিলেন না । কিন্তু তাঁহার নেত্রযুগলে দুইটি মত্তাফল দেখা দিল । বিপ্রদাস প্ৰেম-অগ্রপাত করিলেন । তদশনে সবণের চক্ষে সেইরাপ মুক্তাফল ফলিল । হেম মাটির দিকে মাথা নামাইলেন । যে-গহে মধ্যে মধ্যে এরুপ মস্তোফল ফলে না, সে গাহের গহিসেথরা যথাথ* দীন, তাহার আর সন্দেহ নাই । বিপ্রদাস ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া হেমকে নানাবিধ প্রশ্ন করিতে লাগিলেন । অতঃপর নানের বেলা হইলে সকলে স্নানাহার করিলেন । স্বৰ্ণলতা পৰববিৎ হেমের নিকট পাঠাভ্যাস করিতে লাগিলেন । তাঁহার দিন দিন উন্নতি দেখিয়া হেম বিস্মিত হইলেন । মাঝে মাঝে বিপ্রদাস খাটে শয়ন করিয়া থাকেন এবং সবণ ও হেম নীচে বসিয়া কি পাঠ করে শ্রবণ করেন । সে সময় বিপ্রদাসের চক্ষে জল ধরে না । দেখিতে দেখিতে হেমের ছুটি ফরাইয়া গেল। ছয়টি চিরকালই দেখিতে দেখিতে যায়। হেম পনরায় বাটী হইতে কলিকাতায় যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলেন । বিপ্রদাস এক দিবস কহিলেন, "হেম ! এবার আমি তোমার সঙ্গে যাব ।” gবণ’লতা-৫