পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৬৬ হেম জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন ?" বিপ্রদাস উত্তর করিলেন, “আমার ক্ৰমে ক্ৰমে বয়স বাড়ছে ছাড়া ত কমছে না ? এই বেলা একট লেখাপড়া কিছু ক'রে যাই । তা না ক’রে যদি মরি, তা হ’লে যা কিছু আছে, কবে কে তোমাদের কাছ থেকে ফাঁকি দিয়ে নেবে।” হেম বিপ্রদাসের কলিকাতায় বাইবার কথা শুনিয়া হষিত হইয়াছিলেন ; কিন্তু কি জন্যে যাইবেন শুনিয়া মহত্তমধ্যে তাঁহার মাখ মান হইল। বিপ্রদাস হেমের মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিলেন, “উইল করবো, তাতে ভয় কি ? লোকে কি উইল করলেই মরে ।” হেমের চক্ষ দিয়া দর দর অশ্রদ্ধারা বহিতে লাগিল । বিপ্রদাস হেমের চক্ষ মছোইয়া কহিলেন, “ছি, কানতে নাই । কত লোকে ছেলেবেলাই উইল করে । একবার উইল ক’রে আবার কত বার বদলায় ।” হেম ক্লন্দন সম্বরণ করিলেন । নিধারিত দিবসে তাঁহার কলিকাতায় যাইবার জন্য যাত্রা করিলেন । বিপ্রদাসের যে গ্রামে বাটী, সে গ্রামে বিনয়কৃষ্ণ ঘোষ হাইকোটের উকিল । বিপ্রদাস হেমের বাসায় দুই এক দিবস অবস্থিতি করিয়া ভবানীপুর বিনয়বাবর বাসায় উপস্থিত হইলেন । বিনয়বাব বিপ্রদাসকে দেখিয়া যত্ন ও ভক্তি করিয়া বসাইলেন। অন্যান্য গল্পের পর বিনয়বাব বিপ্রদাসের আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন । বিপ্রদাস কহিলেন, “বাপু, আমরা ত বড়ো হয়ে পড়লাম, এখন কবে মরি তার ঠিক নাই । তাই ভাবলাম, এই বেলা একটা উইল না করে গেলে পাছে পরে ফাঁকি দিয়ে নেয় ।” বিনয়বাব উত্তর করিলেন, “সে ভালই বিবেচনা করেছেন। উইলের ভাবনা কি ? যখন বলবেন ক’রে দেবো ; কিন্তু আপনি কা'কে কি দিবেন মনে করেছেন ?” বিপ্র । যা কিছু আছে, মনে করেছি—সমান ভাগে সবণকে আর হেমকে দিয়ে যাব । ওর আর চল চিরে ভাগ করায় কাজ কি ? বিনয়বাব কহিলেন, "তা হ’লে হেমের প্রতি অন্যায় হয় । মনে করুন, বণের বিবাহ হ’লে ত হেম তার বিষয়ের অংশ নিতে যাবে না ?” বিপ্র । বিনয়বাব, যা ব’লছ সত্য বটে, কিন্তু মেয়েটি যে সৎপাত্রে পড়বে, তার নিশ্চয় কি ? বিশেষ হেম ব্যাটাছেলে ; বেচে থাকলে কত বিষয় করতে পারবে । আমার বাপ ত আমাকে কিছু দিয়ে যান নাই । বিনয় । সধবাসমেত কত টাকা রেখে যাচ্ছেন ? *সেকেলে” লোক সব বিষয়ে খোলা বটে, কিন্তু সঞ্চিত বিষয় কত, কাহাকে বলে না। বিপ্রদাস একট হাসিয়া কহিলেন, “আমার যৎকিঞ্চিৎ আছে । তা তুমি যেখানে উইল করবে, তোমার কাছে আর গোপন করলে কি হবে ? উইল লেখার দিন টের পাবে।”