পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৬৮ হ'লে বাবে, আর আমি চরি করলে যাবে। এ ছাড়া আর চরি করত আসবে কে । প্রমদা এত দীর পব্যন্ত শনিয়া বারের নিকট হইতে চলিয়া গেলেন । তাঁহার বড়ই আহলাদ হইল। এক বার মনে করিলেন, সেই রাত্রেই টাকাগুলি চরি করিবেন । কিন্ত নিজে গেলে পাছে ধরা পড়েন, এই ভাবিয়া রাত্রে চাপ করিয়া রছিলেন। পরদিবস প্রাতঃকালে শশিভাষণ কাছারি চলিয়া গেলে গদাধর ও জননীকে ডাকিয়া পরামর্শ করিলেন । গদাধরচন্দু আহলাদে আটখান হইয়া কহিল, “ডিডি, টোমার আর কিছু কোরটে হবে না। আমি একলাই পারবো, কিনট ডয়ার খোলা পেলে হয় ।” গদাধরের মাতা কহিলেন, “সে জন্যে ভয় নাই । আমি আজ পাঁচ দিন দেখছি, ওরা দোর খালে রাখে। কিন্ত গদাধরচন্দ্র সাবধান, শ্যামা যদি জেগে থাকে, তবে তুমি এমন কাজে যেও না।” গদাধর উত্তর করিল, “ভয় কি মা । আমি গায়ে টেল মেখে যাব, যডিও টরে টরে, এক টান মেরে পালাবো।" প্রমদা বারে দাঁড়াইয়া ছিলেন, দরে শ্যামাকে আসিতে দেখিয়া মদম্বেরে কহিলেন, “গদাধর চপে চাপ ।” গদাধর চাপ করিল। পরে প্রমদা উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, “গদাধরচন্দ্র, আজ না তুমি বাড়ী যেতে চেয়েছিলে, যাও না কেন ?" গদাধরও উচ্চৈঃস্বরে কহিল, "এখন টো রোড্র হয়ে উঠলো, ওবেলা যাব।" সন্ধ্যার কিঞ্চিৎ আগ্নে গদাধর কাপড়-চোপড় পরিয়া বাটী যাইবার জন্য বাহির হইলেন। কিন্ত রাত্রি ১০ টা ১১ টার সময় পুনরায় ফিরিয়া আসিলেন । প্রমদা দরজা খলিয়া রাখিয়াছিলেন, সুতরাং গদাধর নিঃশব্দেই বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিলেন । গ্রীষ্মকাল, সরলা ও শ্যামা দরজা খলিয়া শইয়া আছেন, দু-জনের মধ্যে শইয়া গোপাল নিদ্রা যাইতেছে, শব্দটি মাত্র শুনা যাইতেছে না । গদাধর সযোগ বুঝিয়া সরলার গহমধ্যে প্রবেশপবেক টাকাগুলি লইয়া সেই রাত্রেই বাটী চলিয়া গেলেন । পরদিন ৭টার সময় গদাধর ফিরিয়া আসিলেন । রাস্তায় আসিবার সময় মনে মনে নানাবিধ চিন্তা করিয়া আসিতেছিলেন । কিন্ত বাটীর মধ্যে প্রবেশ করিয়া কোন গোলযোগের কথা শুনিতে পাইলেন না। পাড়াগায় সহরের মত প্রত্যহ টাকার প্রয়োজন হয় না । সরলার কোন খরচপত্রের আবশ্যক হয় নাই। শ্যামাও সে দিবস সিন্দক খোলে নাই, সতরাং সে দিবস কোন গোলযোগও হইল না । পরদিবস আহার করিয়া গোপাল পাঠশালায় যাইবার সময় কহিল, “মা, আজ মাইনে দিতে হবে, গরমহাশয় কালিই নিয়ে যেতে বলেছিলেন, তা আমার মনে ছিল না। আজ না দিলে হবে না " সরলার তখন অবসর ছিল না । শ্যামাকে ডাকিয়া কহিলেন, “শ্যামা, গোপালের পাঠশালের মাইনে দাও।” শ্যামা সিন্দকে খালিয়া যে পথলে টাকা থাকে খুজিয়া পাইল না ; মনে করিল,