পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একবিংশ পরিচ্ছেদ : ৭১ জমিদার মহাজন হইয়া পড়িয়াছে। অথের প্রতি দকপাতই নাই । যেমন তেমন বাংগালা কাগজে মহামহিম পাঠ লিখিয়া দু-লাখ পাঁচ-লাখ টাকাই কাজ দিতেছে। কেহ গ্রামকে গ্রামই পতনি পাট্টা ইজারা দিতেছে। টাকার সদ, কি জমির নিরিক লইয়া কোনই গোলযোগ হইতেছে না। এতেও গবর্ণমেন্ট জমিদারদিগকে নিন্দা করেন । নিধিরাম পাততাড়ি কক্ষে করিয়া 'ডান হাতে দোয়াত ঝলাইয়া পাঠশালায় দেখা দিল । গরমহাশয় নিধিরামের দেরি হইয়াছে বলিয়া তেলে বেগনে জলিয়া উঠিলেন । নিধিরাম উপস্থিত হইবা মাত্রেই গরমহাশয় সমাদরে নিধিরামকে ডাকিলেন—“নিধে, এ দিকে আয় ত।" হািকম পাস করিয়াই গরমহাশয় বের আস্ফালন করিতে লাগিলেন । তদশনে নিধিরামের ওষ্ঠ, তাল, শাক হইতে আরম্ভ হইল। কিন্ত গর:মহাশয়ের হািকম লঙ্ঘন করিবার জো নাই । নিধিরাম আস্তে ব্যন্তে এজলাসের নিকটে অগ্রসর হইল । গর মহাশয় দক্ষিণ হতে বেল্লাসফালন করিতে করিতে জিজ্ঞাসা করিলেন, "কেন রে নিধে, আজ তোর দেরি হ’ল ?” নিধিরামের চক্ষের তারাদ্বয় মস্তকে উঠিয়াছে । যেন নিধিরামের অস্তিতম কাল উপস্থিত । ঢোক গিলিয়া নিধিরাম উত্তর করিল, "সকাল বেলা তামাক ছিল না, তাই তামাক মেখে আনতে দেরি হয়ে গিয়েছে ।" এক কথাতেই গরমহাশয়ের রাগ কমিয়া গেল । কলিকাটি নিধিরামের হাতে দিয়া কহিলেন, “আচছা, সাজ তোর এক কলিকা তামাক । যদি ভাল হয়, তবে কিছু বলবো না, মন্দ হ’লে তোর হাড় এক জায়গায়, মাস এক জায়গায় করবো।" নিধিরাম বাঁচিয়া গেল । দীঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া পাততাড়ি ফেলিয়া কলিকা-হস্তে তামাক সাজিতে গেল । আড়ালে অসিয়া নিধিরাম তামাক সাজিল এবং নিজে দুই এক টান দিয়া গর মহাশয়ের কাছে লইয়া গেল। নিধিরাম হালি তামাকে দীক্ষিত, সতরাং যে ইচ্ছা, সেই তামাক তার কাছে ভাল লাগে । তাহার মুখে ভাল লাগিলে, গর মহাশয়ের মখে ভাল লাগিবে, এই ভাবিয়া হৃস্টচিত্তে গরমহাশয়কে কলিকাটি দিয়া নিজের জায়গায় বসিতে যাইতেছে । গর মহাশয় দুই চারি টান টানিয়াই নিধেকে ডাকিলেন । আজি নিধের অদষ্ট নিতান্ত মন্দ । নিধে মনে করিতে লাগিল, “হায়, আমি সকাল বেলা উঠে কা'র মুখ দেখেছিলাম ? অদন্টে যে কি আছে বলা যায় না।" কিন্ত ভাবিলে আর কি হইবে ? এক পা দ-পা করিয়া কম্পিত কলেবরে নিধিরামকে হাজরে হাজির হইতে হইল । গর মহাশয় কহিলেন, “তবে রে পাজি, তই কি এই তামাক আমার জন্য এনেছিস ?"