পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৭২ নিধি। আমার দোষ কি গরমহাশয় । বাবা কাল হাট থেকে যে তামাক এনেছেন, আমি তাই এনেছি । “তোর বাবা কেমন তামাক আনে আমি দেখাচ্ছি," বলতে না বলতে অমনি গর মহাশয় সপাং সপাং ক’রে নিধিরামের পঠে ঘা-কতক বসাইয়া দিলেন। গরমহাশয় নিধিকে প্রহার করিয়া, বীরভাব ধারণ করিলেন । উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, “দোলের পাবণী যার বার বাকি আছে দাও।” পাঁজিতে যত পাবণ আছে, গরমহাশয় তার প্রতি পাবণে পয়সা আদায় করেন। যদি বাপ মা না দিতে চান, গরমহাশয় বালকদিগকে চরি করিয়া আনিতে শিখাইয়া দেন । ছেলেরা যদি সুবিধামতে বাহিরে পয়সা না পায়, তবে বাড়ীর কোন জিনিসপত্র চরি করিয়া বেচিয়া গরমেহাশয়কে পয়সা দেয়। গরমহাশয়কে সন্তাট করা আর দেবতা সন্তুষ্ট করা, বালকদের কাছে উভয়ই তল্য। দোলের পাম্ববাণী পয়সা যাহারা যাহারা আনিয়াছিল, গরমহাশয়কে দিল । গোপাল দিতে পারিল না । গর মহাশয় গোপালকে ডাকিয়া কহিলেন, “গোপাল, তোমার পয়সা কোথায় ?” গোপাল সকাতরে উত্তর করিল, “গর মহাশয়, আমি কাল দেবো।" প্রহারের ভয়ে গোপাল বলিল, কাল দেবো, কিন্তর কোথায় পাইবে তাহার ঠিক নাই । গর মহাশয় বলিলেন, “তুমি আজ তিন দিন দেবো ব’লে দিতে পারলে না ; কাল যদি না পাই, তৰে তোমাকে নিধের মতন করবো ।” গোপাল দাঁড়াইয়া কহিল, “কালি আমি অবশ্যই আনবো ।” পাঠশালার ছয়টি হইলে গোপাল বাটী যাইবার সময় ভবন নামে আর একটি বালককে বলিল, “ভবন, আমাকে যদি একটা পয়সা ধার দাও, তা হ’লে আমি বচি, তা নইলে কাল আর আমার পিঠের চামড়া থাকবে না।” ভবন কহিল, "তোমার মায়ের কাছ থেকে এনে দাও না কেন ?" গোপাল । মায়ের কাছে পয়সা নেই, থাকলে কি আমি তোমার কাছে ধার চাই ? ভবেন । তবে তোমার জলখাবার পয়সা থেকে দাও না কেন ? গোপাল । আমি জল খাবার পয়সা পাই নে । তা যদি পেতাম, তা হ’লে আমি তোমার কাছে ধার চাইতাম না । ভুবন । তুমি জলখাবার পয়সা পাওনা, তবে জল খাও কি ? আজ বাড়ী গিয়ে কি খাবে ? গোপাল । তা ত আমি বলতে পারি নে। যদি কিছু থাকে, তবে মা দেবে। যদি না থাকে, তবে খাবো না । ভবন । তুমি বাড়ী গিয়ে খাবার চাও না ?