পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বণলতা : ৭৪ গোপাল একট লজিত হইয়া হে’ট মুখে কহিল, “আপনার কাছে ।" ভবনের মাতা কহিলেন, “আমি কে, তা না বলে জল দেবো না " গোপাল আরও লজ্জিত হইল এবং আরক্সিম মুখ হে’ট করিয়া রহিল। ভবনের মা পাবের মতন অলপ হাসিতে হাসিতে কহিলেন, "আমাকে যদি বলো, মা, একট, জল দাও, তা হ’লে দেবো, নইলে দেবো না ।” 5. গোপাল গাঢ়সবরে কহিল, “মা, একট, জল দাও।” ভবনের মা গোপালকে অবিলম্ব কোলে লইলেন এবং শিরশচন্বন করিয়া আর এক গেলাস ভুল দিলেন । গোপাল ক্ষণকাল চক্ষের জলে কিছুই দেখিতে পাইল না । ভবনের মায়ের সকধে নিজ মন্তক রাখিয়া চক্ষ মুদ্রিত করিয়া রহিল। ভবনের মাতার চক্ষ হইতে ঝর ঝর জল গোপলের বাহমেলে পড়িতে লাগিল । গদাধর, তোমারও মা আছে ! প্রমদা, তোমারও সস্তান আছে ! অনেক ক্ষণ কোলে রাখিয়া ভবনের মাতা গোপালকে নামাইয়া দিয়া পন্ববৎ গোপালের হাত ধরিয়া কহিলেন, “গোপাল, আগে বলো যে, তুমি পাঠশালা থেকে বাড়ী যাইবার সময় রোজ এখানে আসবে, তা নইলে তোমাকে যেতে দেবো না।” গোপাল কহিল, "আমি রোজই আসবে। ” ভবনের মাতা তখন গোপালের হাতে একটি টাকা দিয়া কহিলেন, “যাও, এখন দু-জনে গিয়ে খেলা করো। বাড়ী যাবার সময় আমাকে না ব’লে যেও না।” দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ নীলকমল যাত্রার দলে নীলকমল কালীঘাটে বাবরে বাড়ী খায় দায় থাকে, কাজ কাম করে । বাব একটি ভাল বেহালা খরিদ করিয়া দিয়াছেন। সকলে কুঠি কাছারি চলিয়া গেলে সেইটি বাজায় । তাহাকে দেখিয়া যদি কেহ বাবকে জিজ্ঞাসা করিত, "এটি কে,” বাবর উত্তর করিবার অগ্নে নীলকমল কহিত, “আমি একজন কালওয়াৎ ; বাবকে গানবাজনা শোনাই, আর বাবর বাড়ীতে বাসা করিয়া থাকি।” বস্ততঃ নীলকমলের বারা বাবর একটি চাকরের কাজ চলিত। এ জন্য বাব: নীলকমলের কথায় একট: হাসিয়া ক্ষান্ত হইতেন, আর কিছু বলতেন না । রাস্তা দিয়া ফিরিওয়ালারা যখনই হাঁকিয়া যাইত, নীলকমল তখনই তাহাদিগকে ডাকিত । নিকটে আসিলে নীলকমল জিজ্ঞাসা করিত, "আজ কোন জায়গায় কাররে যাত্রা হবে বলতে পার ?” যে ফিরিওয়ালা একবার নীলকমলের ডাকে আসিয়াছে, সে আর ম্বিতীয় বার আসিত না । নীলকমলও আর কাহারও কাছে জিজ্ঞাসা করিত না । তার বিশ্বাস ছিল, ফিরিওয়ালারা সকল বাটীতে যায়, সতরাং সব জায়গার খবর জানে ।