পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৭৮ নাই, এই সমস্ত ভাবিয়া পান্ডার উপদেশ গ্রহণ করিলেন না। এক দিবস একাকী বসিয়া বিধুভুষণ নিজের অবস্থা পৰ্য্যালোচনা করিতেছেন । *পবেই বা কি ছিলাম, এখনই বা কি হইয়াছি । শরীরে সামথ্য মাত্র নাই । যেখানে বসিয়া থাকি, সেইখানেই থাকিতে ইচছা করে, মনে উৎসাহের চিহ্নও নাই, বস্ত্রাদি দেখিলে আর ব্রাহ্মণ কেহই কহিবে না,বাড়ীর খবর পাইলাম না, পত্র লেখি—তাহারও জবাব পাই না, পথে একজন লোকের সঙ্গে দেখা হ’ল, সেই বা কোথায় ? আমার আদষ্টই বুঝি এমনি যে, যাহার সহিত আমার সংস্পশ হইবে, তাহার আর সখে হইবে না । আহা, সরলার যদি অন্য কাহারও সহিত বিবাহ হইত, তাহা হইলে আর কোন সুখ হউক বা না হউক, অনাহারে থাকিতে হইত না।" সরলার কথা মনে হইয়া বিধভষেণের চক্ষ হইতে ঝর ঝর করিয়া অশ্রপাত হইতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে শশিভাষণ ও প্রমদার কথা মনে হইয়া তাঁহার চেহারার আর এক প্রকার ভাবাতর হইল । চক্ষ লাল হইল। মুখভঙ্গি ভীষণাকার হইল, এবং দক্ষিণ হস্ত দঢ় মটিবদ্ধ হইল। পুনরায় গদাধরচন্দ্র ও তদীয় জননীর কথা মনে হইয়া মুখে ঈষৎ হাস্য উপস্থিত হইল । মুখমণ্ডল হৃদয়ের দপণস্বরুপ । অন্তঃকরণে যখন যে ভাবের উদয় হয়, মুখে অবিলবে তাহা প্রতিবিম্বিত হইয়া থাকে । অন্তঃকরণে দুঃখ উপস্থিত হইলে মুখ মন হয় : সখ উপস্থিত হইলে মুখ প্রফল হয় । অন্তঃকরণে রাগের কারণ সঞ্চার হইলে চক্ষ আরক্তবর্ণ হয়, ওঠাধর কপিতে থাকে ও দন্তে দন্ত নিপেষিত হয় । ফলতঃ চিত্ত যখন যে রসে অভিষিক্ত থাকে, মুখমণ্ডলে তখনই তাহার প্রতিবিম্ব পতিত হয় । সুতরাং মনষ্যের মুখ জীবদ্দশায় নিয়তই বিকৃত ভাবে থাকে। স্বাভাবিক কাহার কেমন মখে, তাহা মৃত্যুর পরে ব্যতীত জানা যায় না । অতি অলপ ক্ষণের মধ্যেই বিধভষেণের মুখে দুঃখ, রাগ ও কৌতকের চিহ্ন দশন করিয়া তাঁহার পাড়া-বন্ধ কহিল, “কি হে পাগল হইবার উদ্যোগ করতেছ ना कि ?” . বিধভষেণ চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, সুতরাং পাণ্ডা-বন্ধ নিকটে আসিয়াচে, তাহা টের পান নাই। এ জন্য তাহার কথা শুনিয়া চমকিয়া উঠিয়া কহিলেন, "হাঁ, কি বলছো ?” পাণ্ডা। এমন কিছ না, পাঁচালি শুনবে ? আমাদের দেশের এক দল পাঁচালিওয়ালা এসেছে। চল, আজ পাঁচালি হবে, শনে আসি । বিধভষেণ সবক্ষিণই প্রস্তুত । বলিবা মাত্রই তাহার সঙ্গে চলিলেন । কিয়দর গমন করিয়া পাল্ডা কহিল, “তুমি যে বলেছিলে, কোন যাত্রার দলে চাকরি করবে। এই ত উপস্থিত আছে, করো না কেন ?" বিধভযেণ আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কৈ কৈ ?” পাল্ডা কহিল, “যেখানে আমরা পাঁচালী শুনতে যাচ্ছি, সেইখানেই আছে । আমার সঙ্গে দলের অধিকারীর দেখা হয়েছিল । তার বাড়ী আমাদের গ্রামে ।