পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ : ৭৯ তাদের যে এক জন বাদ্যকর আছে, সে ত একে ভাল বাজাইতে পারে না, আবার তার উপর মদ খায়। নতন দল, এক সময়ে এক জন ভাল লোক না রাখলে নাম হবে না । এই জন্য আমাকে বলেছিল, যদি তোমার কোন আলাপী লোক থাকে, সঙ্গে করে নিয়ে এস। কিন্ত এক বন্দোবসত করতে হবে । তারা এখন মাইনে দিতে পারবে না। যা পায়, তার বখরা দিতে প্রস্তত আছে।” বিধভষেণের মন—এখন হ’লেই হয়, বখরাই দিক, আর মাইনেই দিক । এই কথা সাংগ না হইতে হইতে তাহারা পাঁচালির দলে গিয়ে উপস্থিত হইল। আর দুই ঘণ্টা বাদ পাঁচালি আরম্ভ হইবেক । পাড়া দলের কত্তাকে কহিল, “এই তোমার লোক এনেছি।” বিধভষেণের বেশভুষা দেখিয়া দলের কত্তার কিছু অভক্তি'হইল, কিন্তু সে ভাব গোপন করিয়া বিধকে কহিল, "আপনি একবার বাজান দেখি ?" এই বলিয়া এক জোড়া তবলা তাঁহার কাছে দিল । বিধভষেণ বাজাইলেন । পাঁচালিওয়ালা বড় ধত্তে । মনে মনে পছন্দ হইয়াছে, কিন্ত প্রকাশে বলিলে পাছে বেশী দর হইয়া যায়, এ জন্য মুখ বাঁকাইয়া কহিল, "হাঁ, চলতে পারে।" পরে পাণ্ডার দিকে মুখ ফিরাইয়া—“বন্দোবস্তের কথা বলেছ ?” পান্ডা কহিল—“হাঁ ।" অধিকারী । তাতেই স্বীকার ? পাড়া । তাতেই । অধিকারী । তবে কবে থেকে মিশবেন ? বিধ । যবে থেকে বলেন । অধিকারী । তবে আজ । বিধ । আচ্ছা তাই । বিধভষেণের পাঁচালির দলে যাওয়া অবধি যেন দলের আদষ্ট ফিরিয়া গেল । অলপ দিবসের মধ্যেই দলের নাম প্রকাশ হইয়া পড়িল, এবং দেশ-বিদেশ হইতে বায়নপত্র আসিতে লাগিল । “টাকা হইলে লোকের চেহারা ফেরে” সকলেই বলিয়া থাকে, বসতত সে কথা যথার্থ, বিধর এক্ষণে বিলক্ষণ আয় হইল । তাঁহার মলিন বসন দরে হইল, মুখভঙ্গী ভাল হইয়া আসিল, কিন্ত পাবের ন্যায় চিন্তাশন আর হইল না। পৃথিবীতে অতি অলপ লোকেই ক্ৰমে ক্ৰমে প্রাচীন হয়। অধিকাংশই হঠাৎ বিজ্ঞ হইয়া বসে, এমন সব্বদাই দেখা গিয়া থাকে । আজি দিব্য যুবা পরষ, অনবরত আমোদ প্রমোদ করিতেছে, কোন ভাবনা চিন্তা নাই, দুঃখ ক্লেশ কাহাকে বলে জানে না, দেখিলে বোধ হয় যেন চিরকালই তার এই ভাবেই কাটিয়া যাইবে ; এমন সময়ে তাহার পিতা কিবা মাতা কিবা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার কাল হইল। আর সে প্রফল মুখে হাসি নাই, সে ক্রীড়া কোঁতকে আসক্তি নাই । একেবারে সমুদয়ই পরিবত্তান হইয়াছে। এক রাত্রিতে বন্ধ হইয়াছে । বিধভাষণ পথক হইবার দিন অবধিই বিজ্ঞ হইয়াছেন। -