পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্ব্বিংশ পরিচ্ছেদ : ৮৩ আছে। বিধভাষণ নিকটে গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “নীলকমল, কোথা থেকে এখানে জুটলে ?” নীল । আরে যাও ঠাকুর, তোমার কথায় কাজ নাই । ওরাই নয় হেসে উঠলো, আমাকে চিনতে পারে না । কিন্ত তুমি কেমন করে হাসলে ? তুমি ত আমাকে চিনতে, তুমি কেন দুটো কথা বলে দিলে না । বিধভাষণ কহিলেন, “নীলকমল, আমি ত—তুমি নীলকমল নও ভেবে হাসি নি । তোমার কথায় হাসি এলো ।” নীল । আমার কথায় হাসি এলো কেন ? আমি কি পাগল ? বিধ । আমি ত বলছি না যে, তুমি পাগল । নীল । আমি আর এ দলে থাকবো না । বিধভযণ কহিলেন, “নীলকমল, তুমি আমাদের সঙ্গে চল । আমাদের পাঁচালির দল, সেখানে সঙ সাজা নেই, সেই বেশ হবে! তুমি এখানে কত বেতন পাও ” নীলকমল ক্ষণকাল চপ করিয়া থাকিয়া কহিল, “৬ টাকা ।” নীলকমল দ-টাকা বেণী করিয়া বলিল। এ রোগ অনেকেরই আছে, খালি নীলকমলের मं । বিধভাষণ এক্ষণে দলের প্রধান হইয়াছেন বলিলে হয় । এ জন্য তিনি কহিলেন, "তবে তোমার কাপড়-চোপড় নিয়ে এস। আর যা পাওনা থাকে, তাও নিয়ে এস। আমরা তোমাকে ৬ টাকা মাইনে দেবো।” এই বলিয়া বিধুভুষণ চলিয়া গেলেন । নীলকমল মনে করিল, “যদি আর দু-টাকা বেশী ক'রে বলিতাম, তাহা হলেও ত পেতাম । আহা হা! আমি বোকামি করেছি।” নীলকমল মনস্তাপে বাসায় ফিরিন্না গেল। দলের কত্তার নিকট কহিল, “আমার মাইনে হিসাব ক'রে দাও, আমি আর তোমার সঙ্গে থাকবো না ।” দলের কত্তাও নীলকমলের উপর বড় চটিয়া ছিল । সুতরাং মাহিয়ানা হিসাব করিয়া দিতে আর কোন আপত্তি করিল না । নীলকমল মাহিয়ানা ও বেহালাটি লইয়া পাঁচালির দলে আসিল । নীলকমল পাঁচালির দলে আসিয়া বিধভষেণকে ডাকিয়া কহিল, "দাদাঠাকুর, আমি চললাম।” বিধভযণ কহিলেন, “কোথায় ?” নীলকমল । যে দিকে পা চলে । বিধুভুষণ । তার মানে কি নীলকমল ? নীলকমল মুখ অাঁধার করিয়া উত্তর করিল, “আর আমার এ জীবনে কাজ কি ? দেশে থাকতে পারলাম না। বিদেশে এলাম, এখানেও সুখ হ’ল না । এখন চলাম—যে-দেশে আলাপী লোকের মুখ দেখতে না পাই, সেই দেশে যাই ।”