পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৩ সংসারে আর অধিক কাল থাকা আয় ব্যয় সম্বন্ধে সুবিধার বিষয় নহে । শশিভাষণ তথাচ হঠাৎ কোন অসদ্ভাব প্রকাশ করেন নাই। হাজার হউক, তব: দুই ভাই । উভয়েই এক মায়ের গর্ভে জমিয়াছে, এক মায়ের স্তন্য পান করিয়াছে। সহস্র বিবাদ হইলেও পরস্পরের প্রতি একেবারে স্নেহশন্য হয় না । কিন্ত তাঁহাদের স্ত্রীদিগের মধ্যে ত আর সে রক্তের টন নাই । মাঝে মাঝে তাঁহাদিগের মধ্যে কলহ বিবাদ হইতে আরম্ভ হইল, কিন্ত স্বামীর পোষকতা কেহই পান না, এ জন্য এ পয্যন্ত গাহবিচ্ছেদ ঘটে নাই । সকলে এই ভাবে অবস্থিত, এমন সময়ে এক দিবস বৈকালে নানাবিধ দ্রব্যপণ দোকান লইয়া একজন মনোহারী ঐ পাড়াম আসিয়া উপস্থিত হইল। তদশনে পাড়ায় যাবতীয় ছেলে পিলে ও বউ ঝি তথায় একত্র হইল। কেহ কেহ কিনিতে লাগিল, কেহ কেহ ( অথাৎ যাহাঁদের পয়সার অপ্রতলে, তাহারা ) জিনিসের দর জানিয়া চলিয়া যাইতে লাগিল । যে সকল ছেলে পিলে খেলনা পাইল, তাহারা আহলাদে নত্য আরম্ভ করিল। যাহারা কিছু পাইল না, তাহারা কান্না ধরিল। সমদা ( শশীর সত্ৰী ) নিজের মেয়ে ও ছেলেটিকে এক একটি বাঁশী কিনিয়া দিলেন, কিন্ত বিধরে ছেলের জন্য কিছু কিনিলেন না। সরলাও (বিধার সত্ৰী ) সেইখানে ছিলেন, কিন্ত তাঁহার নিকট পয়সা ছিল না বলিয়া পত্রের জন্য কিছ: লইতে পারিলেন না । তাঁহার পত্রেও তৎকালে সে স্থানে ছিল না। এ জন্য সরলা ফিরিয়া আসিতেছেন, এমন সময় দরে হইতে মা মা করিয়া গোপাল আসিয়া কহিতে লাগিল,-“মা, ওখানে কি, চল আমরা গিয়ে দেখি।” সরল কহিলেন, “ওখানে সব ঝগড়া করছে । আমরা ওখানে যাব না, গেলে আমাদের মারবে ।" “কেমন ক’রে ঝগড়া কচ্ছে, কে মারবে আমি দেখবো ।” "না, ও দেখতে নাই ; চল আমরা শীগগির পালাই ।” “না, আমি যাবো ।" - প্রমদা, সরলা ও তদীয় পত্রকে তদবপথ দেখিয়া, তাঁহার পত্র কন্যাকে বললেন—“যা না বিপিন, এখানে কি করিস ; যা, গোপালকে তোর কেমন বাঁশী হয়েছে দেখা গে। যা কামিনী, তইও যা।" মাত আজ্ঞা প্রাপ্ত মাত্র উভয়ে বাঁশী বাজাইতে বাজাইতে গোপালের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল । গোপাল তদশনে "আমায় একটা" বলিয়া কাদিয়া উঠিল । সরলা বলিলেন, “আজ আর নেই, কাল যখন নিয়ে আসবে, তখন তোরে একটা দেব ।” গোপাল “না—আছে, আজই দিতে হবে" বলিয়া ক্ৰন্দন ও অঞ্চল আকষণ করিতে লাগিল । সরলা কি করেন, অগত্যা মনোহারীর দোকানের নিকট গমন করিলেন –