পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৮৪ বিধ । কেন, কেন, এই ত আমি বলে—আমাদের দলে থাকবে । আমি সকলকে ব’লে ঠিকঠাক করলাম। এখন আবার এমন কথা বলছো কেন ? নীল । এখানে যদি থাকি, তোমরা আমাকে নিয়ে কত হাসিঠাট্টা করবে ; আমার তা বরদাপ্ত হবে না। হয় ত আমায় হনুমান ছাড়া আর কিছু বলবেই না। রাস্তায় আসতে কতকগলা ছেলে আমার পাছে লেগে গেল। সদ্য মিত্রী যেমন বলতো—“কাগের পাছে ফিগে লাগে,” তেমনি সকলেই আমাকে হনুমান হনুমান বলে ডাকে । আমি ত আসছিলাম তোমাদের দলে থাকবার জন্য, কিন্তু এমন করলে ত আর থাকা হবে না । বিধভাষণ কহিলেন, “নীলকমল, এখানে তোমাকে হনমান বলে কেউ ডাকবে না ।” এই কথা বলিবার সময় বিধভষেণের মখে একটা ঈষৎ হাসি দেখা झिल । নীলকমল তাহাতেই রাগত হইয়া কহিল, “ঐ ঠাকুর তুমিই বলছো, তার আর অন্যে কি ছাড়বে ?” বিধ্যভাষণ কহিলেন, "কৈ, আমি ত তোমাকে তা বলে ডাকি নাই।" নীলকমল কহিল, "তবে দিবি ক’রে বলো, আর ও-কথা মুখে আনবে না ।” বিধভাষণ । আচ্ছা, দিবি.ক’রেই বললাম। এখন হ’ল ত । নীল । হ’ল বটে, কিন্ত তুমি যেন না বলে, আর সকলে ছাড়বে কেন ? তারা ত "বেধে মারে সয় বড়" তা ত বুঝবে না । আমার যে কত দুঃখ হয়, তারা ত টের পাবে না। দাদাঠাকুর, আমি যদি এ জানতাম, তা হ’লে কি আমি কখন রামবাজার দলে যেতাম ? বিধ্যভাষণ কহিলেন, “আচ্ছা, আমি এইখানে বসো, আমি গিয়া সকলকে প্রতিজ্ঞা করিয়ে আসি, তার পর তোমাকে নিয়ে যাব।" বিধভষেণ এই বলিয়া ঘরের মধ্যে গেলেন । নীলকমল বিধভষেণের কথায় অনেক আশ্বাসিত হইয়া অপেক্ষাকৃত প্রফললচিত্ত হইল। এবং ঘন ঘন করিয়া “পদ্মঅখি আজ্ঞা দিলে, পদ্মবনে আমি যাব" ইত্যাদি গাইতে লাগিল । নীলকমল তিন চারি ফেরতা “পদ্মঅখি” গাইল । এমন সময় বিধুভুষণ ফিরিয়া আসিলেন । নীলকমল ঘনে ঘনে না ছাড়িয়া ইসারার দ্বারায় জিজ্ঞাসা করিল, খবর কি ? বিধভষেণ অনেক দিবসের পর পামঅখির গান শনিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া নীলকমলের দিকে অগ্রসর হইলেন । বিধার হাসি দেখিয়া নীলকমলের চেহারা গরম হইল। বিধ কহিলেন, “নীলকমল, এবার আমার দোষ নাই, তুমি যদি নিজেই হনুমান স্বীকার করো, তবে আর লোকের অপরাধ কি ?" নীলকমল কহিল, “কৈ আমি স্বীকার করলাম ?”