পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ : ৮৫ বিধ্যভাষণ কহিলেন, “ঐ গানই ত সকল দোষের মলে । ও গানটার মানে জান ?” নীলকমল কহিল, “আমি জানি না-জানি তোমার কি, তোমার কাছে যখন জিজ্ঞাসা করবো, তখন ব’লে দিও " বিধুভুষণ কহিলেন, “নীলকমল, রাগ ক’রো না । রামচন্দ্র যখন রাবণ বধ করবার জন্য দাগোৎসব করেন, তখন নীলপদ্ম কে আনবে, এই কথা ওঠায় হনুমান স্বীকার হ’ল, তাই ঐ গানটা হয়েছে। ‘পদ্মঅখি আজ্ঞা দিলে পদ্মবনে আমি যাবো, আনিয়া নীল পদ্ম সে নীল পদ্ম চরণপদ্মে দিব” ।” নীলকমল বিস্মিত হইয়া কহিল, “বটে ।” বিধুভুষণ কহিলেন, “আমি ত ঠিক ক’রে এলাম, তোমাকে কেউ কিছু বলবে না। কিন্ত তোমাকে একটা কথা বলে দি, তুমি আর কখন পদ্মঅখির গান গেও না। ওটা শুনলেই লোকের মনে হবে ।” নীলকমল কহিল, “আচছা, আজ অবধি ত্যাগ করলাম " পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ “গ্রাম কার কি করেছে ?” বিধভষেণের বাটী হইতে যাত্রা করিয়া বিদেশে গমন অবধি চারি বৎসর অতিবাহিত হইয়া গিয়াছে । যতই দিন যায়, সরলা ততই উৎকণ্ঠিতা হন । এক মাস, দু-মাস, তিন মাস, এই প্রকারে চারি বৎসর অতিবাহিত হইল, তথাপি বিধভষণের কোন পত্রাদি পান না । সরলা -এমন দেবতা নাই, যাঁহার উপাসনা করেন নাই, এমন উচ্চ সথান নাই, যেখানে মাথা খোঁড়েন নাই । ভাবনায় সরলার শরীর শীর্ণ হইয়া গেল । সরল। এক স্থানে বসিলে অভ্যার উঠেন না, কেহ পৰেবা কগ না কহিলে কাহারও সহিত কথা কন না । তাঁহার অন্নে রুচি নাই, রাত্রিতে নিদ্রা নাই । শীতকালে শরীরের ঘমে শয্যা ভিজিয়া যায় । তাঁহার শরীর যতই শীণ হইতে লাগিল, মুখের শ্রী ততই বাড়িতে লাগিল। বৈকাল হইলে চক্ষ ঈষৎ রক্তবর্ণ হয় ও মুখ আরও টলটলে দেখায়, সরলার শরীরে যক্ষার সত্রপাত হইয়াছে । এত কাল পয্যন্ত শ্যামার যে টাকা ছিল, তাহাতেই এক রকমে চলিয়া গেল । ক্ৰমে ক্ৰমে সে বল ফরাইয়া আসিল । সরলার ভাবনারও বধি হইল । পতি বিদেশে, তাঁহার কোন খবর নাই, ঘরে অন্ন নাই । সরলার পীড়াও বধি হইতে লাগিল । এমন ক্ষীণ হইলেন যে, বসিলে আর সহজে উঠিতে পারেন না । শ্যামা তখন উভয়ের মাতা সবরপ হইল। প্রাতঃকালে উঠিয়া গোপাল ও সরলা উভয়ের সেবা-শুশ্রুষা করিয়া পাড়ায় বাহির হয় । কোন বাড়ীতে কাজকৰ্ম্ম করিয়া দিয়া আপনার আহারের জন্যে যাহা পায়, আনিয়া গোপালকে ও সরলকে খাওয়ায় ; পরে নিজে আর এক বাড়ী হইতে খাইয়া আইসে ; ঘরে আর এমন জিনিসপত্র